গাংনীর মুন্দাইল খাল পুনর্খননে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মুন্দাইল খাল পুনর্খননে অনিয়ম নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। নীতিমালা অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। যন্ত্র দিয়ে খনন করায় কাজ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এলাকায় দরিদ্র দুস্থ মাটিকাটা শ্রমিকরা। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগে কর্ণপাত করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও এলজিইডি।

বর্ষা মরসুমে পানি নিষ্কাসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও মাছের উৎস সৃষ্টির লক্ষ্যে এলজিইডি ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন সেক্টর প্রকল্পের আওতায় মুন্দাইল খাল পুনর্খনন উপ প্রকল্পে ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার পুনর্খননে ৪৩ লাখ ১০ হাজার ৯৫৬ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী খাল সংশ্লিষ্ট পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যরা খনন কাজ করবেন। কিন্তু নীতিমালা উপেক্ষা করে পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির আব্দাল হক, শহিদুল ইসলাম নাসির ও আশাদুল ইসলামসহ কতিপয় সদস্য সমিতির মনগড়া কাগজপত্র তৈরি করে খননের কাজ করছেন। বাকি সদস্যদের অন্ধকারে রেখেই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। সমিতির অহসায় শ্রমিকদের কাজের সুযোগে না দিয়ে মাটি কাটা যন্ত্র দিয়ে খনন কাজ করা হয়েছে। শ্রমিকের পরিবর্তে স্কেভেটর দিয়ে খনন করায় মাটি কাটায় বরাদ্দের অর্ধেক খরচ হয়েছে। এতে পর্যাপ্ত গভীরতা করা হয়নি এবং দুপাড়ে যত্রযত্র মাটি ফেলা হয়। শুধুমাত্র তলানির কাদা কোনমতে সরিয়ে দেয়া হয়। দুপাড়ে ওই কাদামাটি যত্রযত্র ফেলে রাখা হয়েছে। এতে খালের পাড় দুটি তার স্বাভাবিক অবস্থান হারিয়েছে। মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হলেও জনদুর্ভোগ নেমে এসেছে। এলজিইডি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দুর্নীতির সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন। উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও দুর্নীতির কারণে সরকারের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি।

সমিতির সদস্য জুগিরগোফা গ্রামের আশা মিয়া জানান, সমিতির কোনো সদস্যকে খননের বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে না। তারা দীর্ঘ অপেক্ষার পরও যখন সঠিকভাবে খনন হয়নি তখন বাধ্য হয়ে অভিযোগ তুলেছেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ করে ড্রইং ডিজাইন অনুযায়ী খাল পুনর্খনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

খাল পুনর্খননের মধ্যদিয়ে এলাকায় মাছচাষ বৃদ্ধি করে সমিতিভুক্ত দুস্থ সদস্যদের জীবন মানোন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কম গভীরতায় খনন ছাড়াও কিছু কিছু স্থানে একেবারেই খনন করা হয়নি। অথচ পুনর্খনন সম্পন্ন হয়েছে মর্মে কাগজপত্র প্রস্তুত করে চুড়ান্ত বিল উত্তোলনের চেষ্টা করছেন সমিতির কতিপয় সেই কয়েক সদস্য। বিষয়টি আমলে নিয়ে সমাধানের দাবি জানিয়েছেন ষোলটাকা ইউনিয়নের বিদায়ী চেয়ারম্যান আয়ুব আলী। খাল পুনর্খনের নামে কতিপয় ব্যক্তি পুকুর চুরি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে জুগিরগোফা গ্রাম থেকে মুন্দাইল বিলের সংযোগের আশেপাশে কয়েকশ গজ খনন করা হয়নি। খনন না করেই বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছেন খনন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়েও গ্রামের মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত আব্দাল, শহিদুল ইসলাম নাছির ও আশাদুল ইসলাম। খাল পুনর্খননের দুর্নীতির বিষয়ে মেহেরপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, দুর্নীতি হলে করো রেহাই নেই। দুর্নীতির সাথে তিনি এবং তার অফিসের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন। তবে খননের নকশা অনুযায়ী কাজ বুঝে চুড়ান্ত বিল দেয়ার কথা বলেন তিনি।

সমিতির বঞ্চিত সদস্যদের অভিযোগ, এলজিইডি গাংনী উপজেলা অফিসের তদারকির দায়িত্ব থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান চৌধুরী এতে হস্তক্ষেপ করছেন। আব্দাল হক, আসাদুল ও শহিদুল ইসলামের সাথে তার সখ্য রয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টিতে সাংবাদিকরা বাধ সাধলে আব্দুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের ওপর চটেছেন। এ ব্যাপারে সম্প্রতি মেহেরপুর এলজিইডি কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সরদারের কাছে বক্তব্য সংগ্রহ করতে যান কয়েকজন সাংবাদিক। তিনি টিভি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে ইতস্ত বোধ করছিলেন। এ সময় তার কক্ষে প্রবেশ করেন আব্দুর রহমান চৌধুরী ও তার পোষ্য এক ঠিকাদার। আব্দুর রহমান চৌধুরী ও ওই ঠিকাদার সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেন এবং অপদস্থ করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নিজের ভুল স্বীকার করে সাংবাদিক নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

এদিকে গাংনীর এই পুনর্খনন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন একজন প্রকৌশলী। তিনি দেখভাল করেন। মাঝেমধ্যে সরজমিন পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রকৌশলী। তাহলে জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান চৌধুরী কেন খাল দেখতে আসেন এবং সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিচ্ছেন সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন আরো জানান, এলজিইউডির কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে ওই খাল পুনর্খননে পুকুর চুরি করা হচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে জুগিরগোফা গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের উপকারভোগী সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যথাযথভাবে খনন না করেই চুড়ান্ত বিল উত্তোলনের পায়তারা করছে ওই তিন ব্যক্তি। যা নিয়ে এলাকায় বইছে প্রতিবাদের ঝড়। যথাযথ খননের মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত বিল পরিশোধ ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।