গাংনীর বাঁশবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিনকে কুপিয়ে খুন : নানা গুঞ্জন

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নুরুল আমিনকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বাড়ির অদূরবর্তী ঈদগার কাছে তার লাশ পাওয়া যায়। বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা। নুরুল আমিন গাংনী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। লাশের ময়নাতদন্ত করিয়ে পরিবারের কাছে প্রেরণ করেছে পুলিশ। নুরুল আমিন (৩৮) বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নাছির উদ্দীনের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা গেলেও রহস্য উন্মোচন হয়নি। গ্রেফতার হয়নি ঘাতকদের কেউ।

নিহতের বড় ভাই শামীম হোসেন জানিয়েছেন, নুরুল আমিন মেহেরপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি স্বতন্ত্রপ্রার্থী মকবুল হোসেনের পক্ষে ভোটের কাজ করছিলেন। রাতে বাঁশবাড়িয়া বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ভোটের প্রচারণা শেষ করে সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। বাড়ির পাশে ঈদগার সামনে পৌঁছুলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে খুন করে। পারিবারিকসূত্রে আরো জানা গেছে, রাত ১১টার দিকে বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের বিদায় দিয়ে তিনি একা বাড়ির পথে রওনা দেন। বাজার থেকে বাড়ি বেশি দূরে নয়। তার ফিরতে দেরি হওয়ায় বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়েন। তারা ভেবেছিলেন গণসংযোগের কাজে হয়তো বেশি সময় দিতে হচ্ছে। গভীররাতে পথচারী এক ভ্যানচালক আশপাশের লোকজনকে জানায়, ঈদগাহের সামনে একটি লাশ পড়ে আছে। বড় ভাই শামীম নুরুল আমিনের কাছে মোবাইল করেন যেন লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু মোবাইল রিসিভ করেননি। ছোট ভাইসহ কয়েকজনকে গিয়ে লাশের কাছে গিয়েও কয়েকবার মোবাইলফোন করে। এক পর্যায়ে ছোট ভাই শনাক্ত করেন লাশটি যে তার-ই মেজ ভাইয়ের। সে মোবাইলফোন রিসিভ করবে কীভাবে? মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চেহারা কিছুটা বিকৃত এবং উপুড় হয়ে পড়ে থাকায় তারা প্রথমে লাশ শনাক্ত করতে পারেননি। খবর পেয়ে ভোরের দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হয়। বিকেলে  বাঁশবাড়িয়া ফুটবল মাঠে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে আরো জানা গেছে, নিহতের বাড়ি ও বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের কোল ঘেষে ঈদগার পাঁচিল। নুরুল আমিন যেহেতু হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তাই স্বাভাবিক কারণে তিনি বাম দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে রাস্তা ও পাঁচিলের দূরত্ব খুবই সামান্য ছিলো। ঈদগার পাঁচিলের ওপরে আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা সহজেই তাকে বাগে পায়। পাঁচিল টপকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। গাংনী থানার ওসি মাছুদুল আলম এমন ধারণার সাথে একমত পোষণ করে জানিয়েছেন, তার মাথার বাম পাশে কোপ লেগেছে। ধারালো অস্ত্রের এক কোপেই হয়তো তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। চিৎকার কিংবা নড়াচড়া করতে পারেননি। এজন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে লাশ পড়ে থাকলেও কেউ বুঝতে পারেননি। ঈদগার মধ্যে পাঁচিলের কাছেই কয়েকজন মানুষ অবস্থান করার চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘাস ও মাটিতে পায়ের চিহ্ন রয়েছে। এতেই হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তটি সহজেই অনুমান করতে পারছে পুলিশ।

নিহতের ভাই শামীম হোসেনসহ পরিবারের লোকজন আরো জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা সম্পত্তি নিয়েও কারো সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিলো না। মিশুক প্রকৃতির এ মানুষটি সবার সাথে হেসে খেলেই চলাফেরা করতেন। তিনি বাঁশবাড়িয়া বাজারের একজন আড়তদার হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছেন। ব্যক্তিগত কোনো শত্র“ ছিলো না বলেই পরিবারের লোকজন জানতো। রাজনৈতিক কারণে খুন হতে পারে বলে তারা প্রাথমিক ধারণা করছেন। তার মৃত্যুতে পরিবার স্বজন, গ্রামবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার বিকেলেই বড় ভাই শামীম হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের নামে গাংনী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাবেক এমপি মকবুল হোসেন ও গাংনী পৌরমেয়র আহম্মেদ আলীসহ নেতৃবৃন্দ। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গাংনী শহরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ খালেকের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

পারিবারিক পরিচয়: বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নাছির উদ্দীনের চার ছেলের মধ্যে নিহত নুরুল আমিন মেজ। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক ছেলের জনক। ছেলে নাফিজ (৮) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তাকে হারিয়ে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান যেমনি হারিয়েছেন প্রাণের স্বজন; তেমনি আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন বলিষ্ঠ নেতাকে। এমন মন্তব্য পরিবার ও নেতাকর্মীদের।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানিয়েছেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবে পুলিশ। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো চিন্তা করেই তদন্ত এগিয়ে চলেছে।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *