গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের ১০টি বাড়ি লকডাউন ।। রোগীর নমুনা সংগ্রহ

গাংনী প্রতিনিধি ( মাথাভাঙ্গা অনলাইন ): মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের ১০টি বাড়ি আজ বুধবার দুপুরে লক ডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। হাঁপানি, জ্বর ও কাশি নিয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া ৫২ বছর বয়সী সেই রোগীকে অবশেষে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ এ ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে রুহুলের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রেরণ করা হচ্ছে আইডিসিআর এ। তাকে গাংনী হাসপাতারের আইসোলশন ইউনিটে রাখা হয়েছে  বলে জানান আরএমও।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা: নাসির উদ্দীন বলেন, ওই রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রোগীর বাড়িসহ আশেপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করার জন্য জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।

একই সাথে মেহেরপুর জেলার সকল মানুষকে সরকারী নির্দেশনা মেনে ঘরে অবস্থান করা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।

লকডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ১০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সব বাড়ির লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে জরুরী কোন কিছুর প্রয়োজন হলে সেটি তাদের পৌঁছে দেয়া হবে। রোগীর  নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রোগীর ছেলে আব্দুর বলেন, করোনা ভাইরাস আতংক ছড়িয়ে পড়লে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মীরা গেল সোমবার তাকে পর্যবেক্ষণ করেন। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নেই জানিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যকর্মী। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে একটি প্রেসক্রিপশন লিখে বিদায় করেন কর্তৃপক্ষ। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মঙ্গলবার তাকে ইনজেকশন দেয়ার চেষ্টা করলেও গ্রাম্য চিকিৎসকরা আমাদের বাড়িতে আসতে রাজি হননি। নিরুপায় হয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (গাংনী হাসপাতাল) তাকে নেওয়া হলে ভর্তি করেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে চারতলায় রোগীর ওয়ার্ড কেবিনে তাকে রাখার পরে করোনা আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যান কর্তব্যরত নার্সরা। পালিয়ে যায় ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে রোগী বর্তমানে সুস্থ্য আছেন।

মঙ্গলবার রাত এগারটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে রোগী পালিয়ে যাওয়ার সত্যতা মেলে। তখনও এক রোগী স্বজন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ওই রাতে আতংকের মধ্যে ভর্তি ছিলেন চার জন রোগী।

গ্যাস্টিক নিয়ে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন মাত্র একজন। তিনি গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের জীবন মিয়া। তিনি বলেন, ওই রোগী কেবিনে ভর্তি হওয়ার পর নার্সরা আমাদেরকে জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এ কথা শুনে পুরুষ ওয়ার্ডে থাকা সবাই পালিয়ে গেছে। আমি আর আমার স্ত্রী রয়ে গেছি।

হাসপাতালটির মহিলা ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। সেখানে আতংক নিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন ৩/৪ জন নারী।

রোগীর স্বজন শুকিলা খাতুন বলেন, ওই রোগী ভর্তির পর থেকে নার্সরা নিচে নেমে গেছেন। আর ওয়ার্ডে আসছেন না। ডাক্তারও আসছে না।

সত্যতা নিশ্চিত করে ওই সময় কর্তৃব্যরত নার্স হোসনেয়ারা বলেন, আমি হাইপার টেনশনের রোগী। চাপ নিতে পারছি না তাই ওয়ার্ড ছেড়ে দোতলায় এসেছি।

প্রসুতি ওয়ার্ড ইনচার্জ সিমা মন্ডল বলেন, ওই রোগীকে যেহেতু সবাই সন্দেহ করছেন। তার পরীক্ষা এখনো হয়নি। তাই অন্য কোন স্থানে রেখে চিকিৎসা দিলে ভালো হতো।

 

#ফাইজার০১-০৪-২০