গাংনীর আদমব্যবসায়ী রবিউলকে ঢাকায় হাতুড়িপেটায় হত্যা

গাংনী প্রতিনিধি: ঢাকার পল্টনে রবিউল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। নিহত রবিউল ইসলাম মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ঝুগিরগোফা গ্রামের রবগুল হোসেনের ছেলে। তিনি একজন আদমব্যবসায়ী ছিলেন। আদম ব্যবসার বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পল্টন থানাধীন ৭০/১ নয়াপল্টনের পূর্ব পাশের একটি গলি থেকে গতকাল বিকেলে রবিউলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। চিকিৎসার জন্য পৌনে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পল্টন থানার এসআই মিজানুর দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, নয়াপল্টনের পূর্ব পাশের একটি গলিতে এক যুববকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে যায়। ওই যুবকের মাথা থেতলানো অবস্থায় ছিল। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার রেশ ধরেই তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথা থেতলানো ছিলো। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতের পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে তিনি আদম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাস চারেক আগে তার মাধ্যমে ওলিনগর মাঝের গ্রামের ইন্তাজ আলীকে সৌদি আরবে প্রেরণ করেন রবিউল। কিন্তু সেখানে প্রত্যাশিত কাজ না পাওয়ায় তিন দিন আগে দেশে ফিরে আসেন ইন্তাজ। গত রোববার ইন্তাজ ঢাকায় ফিরে সৌদি ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যে অফিসের মাধ্যমে তাকে সৌদি প্রেরণ করা হয়েছিলো সেখানে যাওয়ার জন্য চাপ দেন ইন্তাজ। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সোমবার রাত সাড়ে নয়টার জেআর বাস চেপে ঢাকায় গিয়েছিলেন ইন্তাজ আলী। নিহতের ভাইয়া গাংনী শহরের ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ঢাকায় পৌঁছুনোর পর রবিউলের সঙ্গে তার কয়েক দফা কথা হয়। বিকেলে তার মোবাইলে কল দিলে পুলিশের একজন এসআই রিসিভ করেন। তিনি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে আরো জানা গেছে, গাংনী থানা সড়কে শ্যালোইঞ্জিন ব্যবসায়ী ছিলেন রবিউল। কয়েক বছর আগে ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে তিনি বিদেশ যাওয়ার জন্য ঘুরছিলেন। এর মধ্যদিয়েই তিনি আদম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রাজধানীর নয়াপল্টনের হ্যাপি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিদেশে শ্রমিক পাঠাতেন। গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের দাউদ হোসেনের ছেলে আদম ব্যাপারী মওদুদ আহম্মেদ মধুর কাছে সাড়ে আট লাখ টাকা পাবেন। রবিউলের ভাইয়া জিয়াকে সৌদি পাঠানোর জন্য ওই টাকা নিয়েছিলেন মধু। বিদেশে পাঠাতে ব্যর্থ হলেও টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে মধুর সঙ্গে রবিউলের চরম বিরোধ চলছিলো। নিহতের ভাইয়া জিয়া বলেন, ইন্তাজ ও মধুর সাথে তার প্রকাশ্য বিরোধ ও শত্রুতা। অপরদিকে আদম ব্যবসার ব্যাপারে আরো বিরোধ থাকতে পারে। ওই বিরোধের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পল্টন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতরাতে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, অভিযুক্ত ইন্তাজ ও মধুকে খোঁজা হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থলের আশেপাশের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।