গাংনীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুজনের পরিচয় শনাক্ত : পুলিশের খাতায় দুজনই চাঁদাবাজ

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে পুলিশের সাথে বন্দুযুদ্ধে নিহত দুজনের পরিচয় মিলেছে। এরা হচ্ছেন গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন (২৪) ও দুলালনগর গ্রামের মওলা বক্সের ছেলে শিপন মিয়া (১৯)। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুজনের পরিবারের সদস্যরা গাংনী থানায় মরদেহ দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেন। নিহতরা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।

ওসি বলেন, নিহত আলমগীরের নামে পার্শ্বর্তী চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা ও গাংনী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা রয়েছে। শিপনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কি-না তা খোঁজার কাজ চলছে। তিনি দুজনই এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী বলে দাবি করেন। সম্প্রতি চাঁদার দাবিতে গাংনীতে ৫টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয় নিহত দুজনসহ তাদের সঙ্গীয় চাঁদাবাজরা। এদের সহযোগীদেরকেও ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।

এদিকে আলমগীরের পিতা আবেদ আলী বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা সাজানো বলে অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার দিনগত গভীর রাতে নিজ গ্রাম থেকে তাদেরকে পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয়। শুক্রবার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে মরদেহ দেখে পরিচয় শনাক্ত করি।

নিহত সিপন আলীর মা মোস্তয়ার বলেন, বুধবার দুপুরে সিপন বাড়িতে ছিলো। মোবাইলে তাকে কে বার কারা হাটবোয়ালিয়া এলাকায় দাওয়াত খাওয়ার জন্য যেতে বলে। বাড়ি থেকে বের হলে তার কোনো খবর পায়নি।

তবে গাংনী থানার ওসি এ বিষয়ে বলেন, চাঁদাবাজরা ইটভাটায় চাঁদাবাজি করে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়তো আটক ও আত্মগোপনের নাটক সাজাতে পারে। আগে থেকে তাদেরকে আটকের প্রশ্নই আসে না।

গাংনী থানাসূত্রে জানা গেছে, এদিকে নিহত দুজনের মরদেহ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে নিহত দুজনের সম্পর্কে এলাকায় খোঁজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কোনো কিছু বলতে না পারলেও তাদের অপরাধ জগত সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা রয়েছে এলাকাবাসীর। তাদের সহযোগী অনেকেই রয়েছেন তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এলাকার মানুষ অনেকটাই অবগত। তবে নিহত দুজনই দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা। তাদের মৃত্যুতে সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। যারা অপরাধিই হোক এমন মৃত্যু কামনা করেনি পরিবার। এমনই বলছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

গত শুক্রবার দুপুরে নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ওইদনিই নিজ নিজ গ্রামে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। তবে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গাংনী থানায় অস্ত্র-বিস্ফোরক আইনে ও পুলিশের ওপর হামলার অপরাধ উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। নিহত দুজনই ওই মামলার আসামি। বাকি আসামিরা আত্মগোপন করেছে। তাদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে গাংনী থানাসূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত তিনটার দিকে গাংনী উপজেলার পূর্বমালসাদহ-বারাদী সড়কের এসএবি ইটভাটার পাশের কলাবাগানে পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে আলমগীর ও শিপন নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।