গাংনীতে ফলদ বৃক্ষ মেলা : হরেক রকমের ফলদ চারায় ক্রেতাদের দৃষ্টি

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনে চলছে ফলদ বৃক্ষ মেলা। গত বুধবার মেলা শুরুর দিন থেকে ক্রেতাদের বিশেষ দৃষ্টি পড়েছে হরেক রকমের ফলদ গাছের চারার দিকে। নার্সারী মালিকরাও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছের চারার ডালি সাজিয়ে বসেছেন।

অর্থ ও পুষ্টির জোগান পেতেই এখন গাংনী উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে ফল বাগান। ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলার সু-স্বাদু আম ও লিচু সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। তাইতো দিনে দিনে বসত বাড়ি ও মাঠেঘাটে ফলদ গাছের বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দীন বলেন, বর্ষা মরসুম হচ্ছে গাছ লাগানোর উত্তম সময়। লাগানোর পর গাছের চারায় গোড়ায় প্রচুর পানি দরকার হয়। যা অন্য সময়ে নিশ্চিত করা সম্ভব নাও হতে পারে। পুষ্টি ও অর্থ প্রাপ্তির জন্য ফলদ বৃক্ষের গাছ বৃদ্ধির জন্যই মেলায় আয়োজন বলে জানান তিনি।

গাংনীর বিপ্লব নার্সারী মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, তার সংগ্রহে রয়েছে দেশীয় প্রচলিত ও অপ্রচলিত অর্ধ শতাধিক ফলদ জাতের চারা। ক্রেতাদের সুবিধার্থে এক প্রকার ছাড়েই মেলায় চারা বিক্রি হচ্ছে। সরকারি কর্মসূচি সফল করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন নার্সারী মালিকরা।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, আম, জাম, লিচু, কাঠাল, পেয়ারাসহ হরেক রকমের ফলদ গাছের চারার সমারোহ। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা টবে লাগানোর জন্য গাছের চারা কিনছেন বিভিন্ন বসয়ী মানুষ। তবে শিশু ও তরুণদের গাছ ক্রয়ে আগ্রহ বেশি।

এবারের মেলায় বিশেষ আকর্ষণ রংপুরের স্থানীয় জাত ‘হাড়িভাঙ্গা আম’। আঁশবিহীন, মাংসল ও সুমিষ্ট স্বাদের এই আম এখন দেশের একটি অন্যতম আম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জুন-জুলাই মাসে গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা যায়। বিধায় আড়াইশ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়াও একেকটি আম ওজনে ২শ’ গ্রাম থেকে ৫শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাংনী ফলদ বৃক্ষমেলায় সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হচ্ছে হাড়িভাঙ্গা আমের চারা। প্রতিটি চারা পাওয়া যাচ্ছে ১শ টাকা থেকে ১২০টাকায়। এছাড়াও স্থানীয় উচ্চফলনশীল ন্যাংড়া, ফজলী, হিমসাগর, আম্রপালি জাতের আমের চারা রয়েছে।

এ অঞ্চলে উৎপাদিত লিচু সারাদেশের মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছে। মেলায় মোজাফফরী, চাইনা, মুম্বাইসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর চারার প্রতিটির দাম ৫০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত।

বরিশালে আমড়া, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের আমড়া কলম ও আটি চারা রয়েছে মেলার বিভিন্ন স্টলে। দর ২৫-৫০ টাকা। যার নাম শুনলেই জিহ্বায় হায় পানি আসে সেই টক তেঁতুলের পাশাপাশি স্টলগুলোতে রয়েছে হাইব্রিড মিষ্টি তেুঁতুল চারা। প্রতিটি দাম ১০ টাকা থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও জলপাই, সফেদা, জামরুল, কামরাঙ্গা চারা পাওয়া যাচ্ছে সাশ্রয়ী দরে।

বর্তমান সময়ে ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় থাই পেয়ারা। থাই পেয়ারা-৭, থাই পেয়ারা-৩, কাজি বা কেজি এবং স্থানীয় জাতের নানা প্রকার পেয়ারার চারা রয়েছে প্রায় সবগুলো স্টলে।

বসত বাড়ির আঙ্গিনায় দুয়েকটি গাছের চারা রোপণের জন্য মেলায় ছুটে আসছেন সৌখিন বৃক্ষপ্রেমিরা। যাদের আঙ্গিনায় তেমন জায়গা নেই তাদের জন্য রয়েছে ছাদে বাগান করার মতো বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা। বিশেষ করে মাল্টা, লেবু, আঙ্গুর, ডালিম, বেদানা ও আমড়ার উচ্চ ফলনশীল জাতের কলম চারা পাওয়া যাচ্ছে। টবে ছাড়াও ক্ষেতে চাষ করা সম্ভব এসব ফলদ গাছের চারা।

মেলায় ইন্ডিয়ান দেবগিরি জাতের পেঁপে চারা। সুস্বাদু ও অল্প সময়ে ফলন পেতে এই জাতের জুড়ি নেই। এর পাশাপাশি দেশীয় জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁপের চারাও পাওয়া যাচ্ছে।

বেল, কাঠাল, মেওয়া, আতা ছাড়াও লটকন ও বারমাসি জামের আমের চারা পাওয়া যাচ্ছে। জাত ভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলায় আসা গাংনী ড্রিগি কলেজের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বলেন, শখ করে চারা কিনেছি। তবে চারা ক্রয়ের চেয়ে বৃক্ষের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী ফলদ বৃক্ষমেলা। প্রথম দিন বেচাকেনা তেমন না হলেও গতকাল থেকে কেনাকাটা জমতে শুরু করেছে বলে জানান নার্সারী মালিকরা।