গাংনীতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে : আল্টিমেটাম ৭২ ঘন্টার মধ্যে গাংনী ইউএনওকে অপসারণ করতে হবে

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গতকাল সোমবার দুপুরে গাংনী বাসস্ট্যান্ড রেজাউল চত্বরে এক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়ারও কথা বলেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রোববার থেকে তিন দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। রোববার ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসস্ট্যান্ড শহীদ রেজাউল চত্বরে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলকে ঘিরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় আগে থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলো পুলিশ। মিছিলটি উপজেলা পরিষদের সামনের প্রধান সড়ক হয়ে হাসপাতালের সামনে থেকে ফিরে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক বন্ধ করে সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। তবে মিছিলটি উপজেলা পরিষদের মধ্যে প্রবেশ করেনি। মিছিলে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে এই মুহূর্তে গাংনী ছাড়তে বলা হয়। মিছিল শেষে গাংনী বাস স্ট্যান্ড রেজাউল চত্ত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এমএ খালেক বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান আওয়ামী লীগ বিরোধী মানুষ। অপরদিকে উপজেলা চেয়াম্যান হচ্ছেন পৌর বিএনপির সভাপতি। তারা সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছেন। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও এডিপি বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি। ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম প্রহরী নিয়োগের বিষয়ে একটি মহল ৭-৮ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগের পায়তারা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে ইউএনওকে সম্পৃক্ত না হতে আমরা অনুরোধ করেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া পেছানোর দাবি জানায়। কিন্তু তিনি বিষয়টি নিয়ে নেতৃবৃন্দের উপর বিরুপ মনোভাব পোষণ করছেন। এ কারণে নিয়োগের ব্যাপারে তার অবস্থান নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইউএনকে অপসারণের সময় বেধে এমএ খালেক বলেন, জনগণের দাবি বস্তবায়ন না হলে আগামি বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরে ঝাড়ু মিছিল করা হবে। লাগাতার কর্মসুচী চলবে। প্রয়োজনে গাংনীতে হরতাল-অবরোধ কর্মসুচী পালন করা হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।

যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আ.লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মোহন, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সানোয়ার হোসেন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু সহ সভাপতি জাকির হোসেন বাচ্চু ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন। এদিকে সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড, উপজেলা পরিষদসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করে গাংনী থানা। বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে পুলিশ প্রহরা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। তারা আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ কেন্দ্র করে যাতে কেউ বাণিজ্য না করতে পারে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। একারণে প্রধান শিক্ষকদের সতর্ক করে স্বচ্ছ নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছিল। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, এ উপজেলার ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগের বিষয়ে রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজ কার্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় করছিলেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা গিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া পেছানোর দাবি করেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা বাধে। ইউএনওকে গালিগালাজ করেন আ.লীগ নেতারা। পরে তার অপসারণ দাবি করে রোববার দু দফা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে।