গলা টিপে ধরে সবুজ মামুন চেপে ধরে দুই হাত শাকিল ধরে দুই পা

nihoto-school-sattro-shojib-1

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সজিব হত্যার একমাস পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। নিখোঁজের ৩২ দিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবি পাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের একটি লাইট ফ্যাক্টরির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে গত ৩১ আগস্ট বুধবার সকালে সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ৱ্যাব। একটি সূত্রে জানা গেছে, সজিবকে অপহরণের এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয়।

গত ২৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে রাকিব মেম্বারের কথামত প্রতিবেশী যুবক শাকিলই তাকে কৌশলে বাইসাইকেলযোগে নিয়ে যায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবিপাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের কথিত ওই লাইট কারখানায়। তার পরপরই রাকিব মেম্বার আর মামুন মোটরসাইকেলযোগে পৌঁছায় সেখানে। এরপর সজিবকে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোমলপানীয় স্পিড খেতে দেয়া হয়। সজিব তা না খেয়ে বাড়ি আসতে চাইলে তাকে জোর জবরদস্তি করে খাওয়ানো হয় স্পিড। সজিব তখন বলে আমি বাড়ি গিয়ে সব বলে দেবো। এ কথা বলার পরপরই কারখানার ম্যানেজার সবুজ তার গলা টিপে ধরে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এরই এক পর্যায়ে সজিবের দুই পা চেপে ধরে দামুড়হুদার শাকিল এবং মামুন চেপে ধরে দুই হাত। এরপর কাঁচি হাতে নিয়ে বুকের ওপর চেপে বসে ঘাতকচক্রের মূলহোতা রাকিব মেম্বার। এ সময় মামুনের হাতের আঙুল কামড়ে ধরে সজিব নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চালায়। কিন্তু ওই ৪ ঘাতকের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি সজিব। তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গলায় কাঁচি ঢুকিয়ে দেয় রাকিব মেম্বার। এরপর তার পরনের জামা-প্যান্ট খুলে নিয়ে একটি পলিথিনের প্যাকেটে ভরে তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ওই পুড়িয়ে ফেলা জামা-প্যান্ট চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউসের সামনের একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। যা আসামি মামুনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পরে ওই ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। গত ২৭ আগস্ট জুড়ানপুর মোড় থেকে রাকিব মেম্বারের সাথে মোবাইলফোনে কথা বলে শাকিল। ৱ্যাব মোবাইলফোন ট্রাকিং করে ৩০ আগস্ট দুপুরে দামুড়হুদা বাজার থেকে তাকে মাইক্রোযোগে তুলে নিয়ে যায়। শাকিলকেই প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাকিলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক লাশের সন্ধান পায় ৱ্যাব। ওইদিন সন্ধ্যায় আটক করা হয় রাকিব মেম্বারকে। এরপর পর্যায়ক্রমে ধরা হয় সবুজ ও মামুনকে। মামলার অপর দুই আসামি আলামিন ও পিনু এখনও পলাতক আছে।

এদিকে আসামি শাকিলের মা দামুড়হুদা ঘাটপাড়ার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন বলেছেন, সজীব অপহরণ হওয়ার পর একমাস ধরে কেঁদেছি আর চোখের জল ফেলেছি। এখন একমাত্র ছেলে শাকিলের জন্য চোখের জল ফেলতে হচ্ছে। এভাবে আর কতো চোখের জল ফেলবো?। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, হয় শাকিলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করুন, না হয় মেরে ফেলুন। একমাস হয়ে গেলো ছেলের কোনো হদিস নেই বলে আবারও কাঁদলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে সজিব নিখোঁজ হয়। নিহত সজিবের নানা আব্দুল হামিদ পরদিন দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ৩২ দিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবিপাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের একটি লাইট ফ্যাক্টরির সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে ৩১ আগস্ট বুধবার সকালে স্কুলছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ওই লাইট তৈরির ফ্যাক্টারিতে অভিযান চালায় ৱ্যাবের একটি বিশেষ টিম। তারা ফাঁয়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ ফুট গভীর সেপটিক ট্যাংক থেকে সজবের লাশ উদ্ধার করে। বিকেলে নিহত সজিবের মামা আব্দুল হালিম বাদী হয়ে রাকিব মেম্বার, সবুজ, আলামিন, পিনু, শাকিল ও মামুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে বাড়ির মালিক কুরবান আলী ও তার স্ত্রী-ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দামুড়হুদা থানা পুলিশ দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মামুন ও শাহিনকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট রাতে ৱ্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় অপহরকচক্রের মূলহোতা রাকিব মেম্বার।