গণতন্ত্র চলমান রাখতেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত নয়, প্রবাহমান রাখতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্বলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। কারণ আমাদের সংবিধান ও আইন তিন মাসের জন্য জনগণের শাসন থাকবে না, এটা সমর্থন করে না। এজন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের একমাত্র মালিক। জনগণের ইচ্ছা অনুসারে এ দেশ পরিচালিত হবে। সেইজন্য তিন মাসের জন্য জনগণের এ সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি। গতকাল বুধবার বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন বিষয়ে আইন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল এসব কথা বলেন। বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, জনগণের সার্বভৌমত্ব চিরবহমান। এটা একদিনের জন্যও স্থগিত রাখা যায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল সংক্রান্ত রায়টি পড়লেই এর মমার্থ বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর যারা হামলা করছে, তারা দুষ্কৃতকারী। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে বলে আমি স্বীকার করি না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত। সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে, একজন মুসলমান হিসেবে আমি লজ্জিত। বিচারপতি খায়রুল বলেন, নির্বাচনের আগে এবং পরে সংখ্যালঘু সমপ্রদায় যেভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হচ্ছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে আমার প্রতিবেশীর কোনো সুরক্ষা নেই।
খায়রুল হক বলেন, এ আইনে বৈষম্য বলতে সকল ধরনের বৈষম্যকেই বোঝাতে চাই। যা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। কারণ ইংল্যান্ডেই সবচেয়ে ভালো আইন প্রণয়ন হয়ে থাকে। আমাদের এখানে নয়। কিছুদিন আগে দেখেছি আমাদের একটি আইনে ৮ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলছে। জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র ও সরকার এ দায়িত্ব অবহেলা করতে পারে না। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না, সরকার এ হামলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। অনতিবিলম্বে এ নির্যাতন বন্ধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে হব। যারা সাম্প্রদায়িতকতার বিষবাষ্প বপন করছে, তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ড. মিজান বলেন, মাঠে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার কথা বলা হলেও তাদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, ভোটার ও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছে। সরকার আমাদেরকে আশা দিচ্ছে, কিন্তু তার কর্মদক্ষতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদি এ ব্যর্থতা প্রলম্বিত হয়, তাহলে অসামপ্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিপন্ন হবে। তাই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হলেও এ অপশক্তিকে রুখে দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে। সেমিনারে বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৪ এর খসড়া উপস্থাপন করেন কমিশনের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ফওজুল আজিম। এতে কমিশনের সদস্য প্রফেসর শাহ আলম ছাড়াও নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর ইউএনডিপির ব্যারিস্টার লুবনা ইয়াসিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।