খুনের আলামত পরীক্ষা : কেবল ঐশী জড়িত

আদালতে আজ স্বীকারোক্তি দেয়ার সম্ভাবনা

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাবা-মায়ের হত্যাকাণ্ডে বার বারই দু বন্ধুকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না হলেও নিজের অবস্থান থেকে গতকাল পর্যন্ত সরে আসেনি ঐশী। তবে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা কখনই সে অস্বীকার করেনি। সাথে যোগ করেছে দু বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি ও সাইদুল ইসলামের নাম। কিন্তু ঐশীর এসব গল্প এখন আর ধোপে টিকছে না। ঘটনার পর বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি যেসব আলামত সংগ্রহ করেছে তার সবকিছুতেই শুধু একজনের সম্পৃক্ততা মিলেছে, আর সে ঐশী রহমান। পাশাপাশি প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন হত্যাকাণ্ডে শুধু ঐশীই অংশ নেয়। নিজে বাঁচতে বিভ্রান্তিকর গল্প ফেঁদেছে সে।

পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান, তার বন্ধু রনি ও বাসার গৃহকর্মী সুমিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার ছিলো রিমান্ডের শেষ দিন। আজ শনিবার তিনজনকেই আদালতে হাজির করা হবে। এর মধ্যে ঐশী আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারে। তা না হলে পুনরায় রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে দু বন্ধুর উপস্থিতির বিষয়টি পরিষ্কার না হলেও ঐশী নিজেকে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করলে স্বীকারোক্তি দিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাদের মতে, যে কেউ নিজেকে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারে।2_21615

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, চামেলী ম্যানশনের ওই ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা কাপড়চোপড়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, বিভিন্ন জায়গায় হাত ও পায়ের ছাপসহ অনেক কিছুই সংগ্রহ করেছিলেন সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা। এগুলো পরীক্ষার পর সিআইডি তাদের রিপোর্ট গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ রিপোর্টগুলো পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, সবকিছুতেই একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে আর সেটি ঐশীর। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদও বলেছেন, মাহফুজ দম্পতির শরীরে যে আঘাতের চিহ্নগুলো পাওয়া গেছে তার সব একই ধরনের, একই অস্ত্রের। অস্ত্রটি খঞ্জর (দু দিকে ধারালো) প্রকৃতির বলেই মনে করেন তিনি। মাহফুজের শরীরে তিনটি আর স্বপ্না রহমানের শরীরে ১১টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিলো। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান এ চিকিত্সক।

ঐশীকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্ধু জনির কাছ থেকে নয়, নিজেই শান্তিনগরের একটি দোকান থেকে ১০টি ঘুমের ওষুধ (নাইট্যাস) কেনে ঐশী। ওই দোকানিও শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা। তবে দোকানি কোনো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ দিয়েছেন না প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ দিলে দোকানিকে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এসব বিষয় নিয়ে শান্তিনগর এলাকার বেশ কয়েকজন দোকানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা বলেন, ঐশী আর সুমির অনেক বক্তব্যই মেলেনি। ঐশী দু বন্ধুর কথা বললেও সুমি ওই বাসায় কখনই কাউকে দেখেনি। যেখানে বন্ধুদের লুকিয়ে রাখার কথা বলেছে, সেখানে কাউকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আর সুমির সামনেই যখন ঐশীর দু বন্ধু বাসায় ঢুকলো তখন সুমি তাদের কেন দেখলো না, তারও জবাব দিতে পারেনি ঐশী। আর বন্ধুরা বাসায় থাকার পরও সুমিকে কেন ঘুম থেকে ডেকে লাশ সরাতে হলো- এমন প্রশ্নেরও কোনো জবাব দিতে পারেনি ঐশী। আর সে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তালা দিয়েই বের হলো কিন্তু তারপর বন্ধুরা কিভাবে বাসা থেকে বের হলো? তারও কোনো জবাব নেই ঐশীর কাছে। ছুরি একটাই তাতেও ঐশীর হাতের ছাপ। তাহলে বন্ধুরা কিভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিলো- এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলছে না ঐশীর কাছ থেকে।

গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার রাতে রাজধানীর চামেলিবাগের চামেলী ম্যানশনের ছয় তলার বি-৫ নম্বর ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে পুলিশ দম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঐশীর কক্ষের বাথরুম থেকে চাদর দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। দুজনের শরীরেই ছিলো উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ছোট ভাই ওহি (৭) ও গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে ফ্ল্যাট ছাড়েন দম্পতির একমাত্র মেয়ে ঐশী। ছোটভাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিলেও ঐশী পলাতক ছিলো। পরের দিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট শনিবার দুপুরে পল্টন থানায় গিয়ে ধরা দেয় ঐশী।