খালেদা জিয়ার সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক?

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে একদল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে খালেদা জিয়া তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে ভেতরে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। অতীতে সরকারি কর্মকর্তারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এবারও তিনি যখন আন্দোলনের ডাক দেবেন, তখন যেন তারা অতীতের মতো রাজপথে নেমে আসেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে সাবেক কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাও অংশ নেন। তবে এ বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে রাজি হননি বিএনপির কোনো নেতা। সাধারণত পেশাজীবীদের সঙ্গে মত বিনিময়ের অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু এ বৈঠকটির বিষয়ে আগে ও পরে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ওএসডি) একেএম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সচিবালয়ের বিএনপিপন্থি একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকে অংশ নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াজী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আবদুল মান্নান ও এ কে এম হুমায়ুন কবির, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ক্যাশ সরকার তোহা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বদিউল কবির, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহিদুল হক, এমএলএসএস মামুন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এমএলএসএস মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তারা সবাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা।

উলি্লখিত সরকারি কর্মকর্তারা রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। প্রথমে চারজন ও পরে দু দফায় আরও ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে অংশ নেয়া বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারা সবাই এখন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কর্মরত আছেন। সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন। তাদের সাথে রাত সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

এছাড়া সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, রিয়াজ রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।সূত্র জানায়, সরকারি কর্মকর্তারা খালেদা জিয়াকে বলেছেন, তারা বিএনপি সমর্থক হওয়ায় নির্যাতিত হচ্ছেন। ভালো পোস্টিং পাচ্ছেন না। কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল রাতে জানান, বিষয়টি তারা শুনেছেন। খোঁজ নিয়ে প্রমাণ হলে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো বৈঠকে ছিলেন না। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন সাবিহ উদ্দিন আহমেদও। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি কোনো গোপন বৈঠক নয়। চাকরিরত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কোনো বৈঠক হয়নি। আপনারা জানেন, ২০ জন উপদেষ্টা আছেন, যারা সবাই সাবেক কর্মকর্তা।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাবেক আমলা ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারা দেখা করতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বাইরে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফ করার সময় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এটি কোনো বৈঠক ছিলো না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (সরকারি কর্মকর্তা) তো আসতেই পারেন। সারাদিনই তো মানুষজন এসেছে। আর সাবেক কর্মকর্তারা তো দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণেই এসেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা এমন বৈঠক করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে জনতার মঞ্চ হয়েছিলো কীভাবে। তখন তো সার্ভিস রুল ভঙ্গ হয়নি। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা পুলিশের ভয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেননি। তারা ভেতরে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।