কোম্পানিগঞ্জ ও নীলফামারীতে ভয়াবহ সহিংসতা : রক্তের বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার: নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ ও নীলফামারীতে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে কোম্পানিগঞ্জে শিবির একটি মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষ ঘটে। এদিকে নীলফামারীতে জামায়াতকর্মীরা এমপি আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িতে হামলা করে। পরে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থল থেকে এমপিকে উদ্ধার করে। লক্ষ্মীপুরে গুলিতে এক জামায়াত নেতা মারা গেছেন। তার পরিবারের দাবি, র‌্যাব বাসার ছাদে নিয়ে তাকে গুলি করে খুন করেছে। অবশ্য এ বিষয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেয় স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. শামসুল হক টুকুর মালিকানাধীন ভবনে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় শনিবার বিকেলে জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের দু ঘণ্টাব্যাপি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হয়েছেন এবং তিন পুলিশসহ জামায়াত-শিবিরের ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। উপজেলার ৬টি সরকারি অফিসে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সরকারি কাগজপত্রসহ সব আসবাবপত্র সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আহতদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশের গুলিতে নিহত শিবিরকর্মী মতিউর রহমান সাজিদ, রায়হান ও সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জন। পুলিশ উপজেলা জামে মসজিদের পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা তিনজনের লাশ দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যায় থানায়। থানার ভেতর কোনো মিডিয়ার কর্মীকে পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছে না। গুলিবিদ্ধরা হলো- পুলিশের কনস্টেবল রাসেদ, বশির, রাজু, শিবিরকর্মী সোহাগ, ওসমান গনি, আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কমপক্ষে ৩০ জন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে বসুরহাট মডেল স্কুল এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি উপজেলা মসজিদের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা দু’দিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ প্রথমে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে শিবিরের বেশ কয়েক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হলে দু পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়।  পুলিশের গুলিতে শিবিরের দু কর্মী ঘটনাস্থলে নিহত হন। ফলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। এতে পুলিশের তিন কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও চাইনিজ রাইফেল থেকে এলোপাতাড়ি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এতে জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। শিবিরের নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলার কেন্দ্রীয় বসুরহাট পোস্ট অফিস, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, আনসার ভিডিপি অফিস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস, এসিল্যান্ড অফিস ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ৬টি সরকারি অফিস সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর জন্য এগিয়ে এলে জামায়াত-শিবিরের কর্মী ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। রাস্তায় আগুন দিয়ে ব্যারিকেড দেয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস সরকারি অফিসগুলো রক্ষা করতে পারেনি। এছাড়া সন্ধ্যার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় মডেল স্কুলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।

নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ হাটের কাছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সদস্যদের সাথে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন, টুপামারি ইউনিয়নের কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, যুবলীগ নেতা ফরহাদ আলম, যুবলীগ কর্মী মুরাদ, শিবির কর্মী খয়রাত, বিএনপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক। এছাড়া নিহত ফেরদৌস ও লেবু’র বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। এর আগে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এমপি আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িতে হামলা করে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মানিক নামের অপর এক বিএনপি কর্মীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বিকেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূর গত বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দেয়া আগুনে ভস্মীভূত পলাশবাড়ী বাজার ও লক্ষ্মীচাপ বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকান পরিদর্শন করতে যান। পরে রামগঞ্জ হয়ে নীলফামারী শহরে যাওয়ার পথে রামগঞ্জ বাজারের কাছে এ হামলার শিকার হন। আগে থেকেই কয়েকশ’ জামায়াত-শিবিরকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে রাস্তা অবরোধ করেছিলো। এ সময় অন্তত ৩০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। দুই পক্ষের মধ্যে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ অবস্থায় এমপি নূর ও তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা নীলফামারী আসার পথে পুনরায় মাঝপথে জামায়াত-শিবির কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। চারদিক থেকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা চালালে এখানেও শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণ করে। এখানে গুরুতর আহত হন জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মাহমুদ ও কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া আবিদসহ প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী। পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন।