কোচিঙের আড়ালে সবুজ-প্রীতির পরকীয়া

 

স্টাফ রিপোর্টার: কোচিঙের আড়ালে পরকীয়ার নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছিলো কিশোর সজলের ঘাতক শিক্ষক সবুজ সূত্রধর। পড়ানোর নাম করে বিবাহিত মর্জিনা ওরফে প্রীতিকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যেতেন তিনি। অন্য শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে লিপ্ত হতেন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। কিশোর শিক্ষার্থী সজল হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃত সবুজ ও তার প্রেমিকা প্রীতি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরও তথ্য আদায়ের জন্য পুলিশ গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। আদালত সবুজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে প্রীতিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাচক্রে লম্পট শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিলো শিক্ষার্থী সজল। এতে তার লাম্পট্য প্রকাশ হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই সজলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে কয়জন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলো কি-না তা জানার জন্য সবুজকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তদন্ত সূত্র মতে, ২৫ বছর বয়সী সবুজ চন্দ্র সূত্রধরের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানা এলাকায়। প্রায় দু বছর আগে থেকে কাফরুল থানাধীন উত্তর ইব্রাহিমপুরের ২০২২ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পরিচয় দেন শিক্ষক হিসেবে। কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবার কখনও বুয়েট থেকে পাস করেছেন বলে আশপাশের লোকজনকে বলেন। এ পরিচয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ির গৃহশিক্ষক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন। তার ভাড়াবাড়ির পাশেই ১১৬৮ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতো সজল ও তার বাবা-মা। সজলের বাড়ির বিপরীত পাশে ৬৪/৬ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতো প্রীতি ও তার পরিবার। কাছাকাছি থাকার সুবাদে অল্প সময়ের মধ্যেই সজল ও প্রীতির পরিবারের সাথে শিক্ষক সবুজের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে স্বামীর অবর্তমানে প্রীতির সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলে সবুজ। একাধিকবার আপত্তিকর অবস্থায় প্রীতির মায়ের কাছে ধরা পড়ার পর ওই বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয় সুবজ। পরে সে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উত্তর কাফরুল এলাকার ৫৭৩/৩ নম্বর বাড়িতে ফ্যান্টাসি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলে। এ কোচিং সেন্টারে ইংরেজি শেখার কথা বলে ভর্তি হয় প্রীতি। সূত্রমতে, সবুজের পরকীয়ায় মজে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে প্রীতি। স্বামী ও সন্তানকে ছেড়ে সবুজের হাত ধরে পালানোর পরিকল্পনা করতে থাকে। এজন্য স্বামী জামাল উদ্দীনের কাছ থেকে কৌশলে প্রায় দু লাখ টাকা নিয়েছিলো। ওই টাকা হাতিয়ে নেয় সবুজ। এরই একপর্যায়ে সজলের চোখে তাদের আপত্তিকর দৃশ্য ধরা পড়ায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে দুজন। জানাজানির ভয়ে কিশোর সজলকে হত্যা করা হয়। এদিকে হত্যার আগে সজলকে কোনো ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য খাইয়েছিলো তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সবুজ জানায়, ২৮ আগস্ট সজলকে ফুসলিয়ে অপহরণ করেছে। পরে হত্যা করে মুক্তিপণের নাটক সাজিয়েছে। ২৯ আগস্ট ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেন। ৫ সেপ্টেম্বর ঢামেক হাসপাতালে নিহতের স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করেন। ওই দিনই কাফরুল থানা পুলিশ সবুজ ও তার প্রেমিকা প্রীতিকে গ্রেফতার করে।