কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আজ

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান : তিন সভাপতি প্রার্থীর ঐক্য পণ্ড?

 

দর্শনা অফিস: অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার ঘটলো অবসান। তিন সভাপতি প্রার্থীর ঐক্য ভেস্তে গেলো বলে উঠেছে গুঞ্জন। ঐকের কোনো এক প্রার্থী হচ্ছে কি-না তা এখনো অস্পষ্ট। সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলী, হাফিজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ নির্বাচনের মাঠে থাকছেন ভোটযুদ্ধে। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের সকল প্রচারণা বন্ধ করা হলেও নীরব প্রচারণা থেমে নেই। দিনদুপুরে ভোটারদের কর্মস্থলে ধর্ণা দিলেও গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি হাঁটছেন প্রার্থীরা।

১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মহাদেশের ২য় সর্ববৃহত্তম ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকলটি। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে আতিয়ার রহমান সভাপতি ও আমজাদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নির্বাচনের সঠিক হিসেব কেউ দিতে না পরলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসাবমতে আজকের নির্বাচন হবে ইউনিয়নের ২২তম নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী তৈয়ব আলীকে ফারুক ও তার দলবল সমর্থন করার পর থেকেই জয়ের পাল্লা ভারী হতে শুরু করে। তৈয়বকে ঠেকাতে তিন সভাপতি প্রার্থী হাফিজ, মোস্তাফিজ ও সবুজের মধ্যে ঐক্য করা হয়। বেশ কিছুদিন ঐক্যের স্লোগান থাকলেও অবশেষে নির্বাচনের একদিন আগে গতকাল সোমবার সকালে ঐক্য ভেস্তে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। কেন কী কারণে তাদের ঐক্য ভেঙে গেছে তা অনেকটাই পরিষ্কার।

এ ব্যাপারে ভেস্তে যাওয়া ঐক্যের তিন শ্রমিক নেতা আলাদা আলাদাভাবে মন্তব্য করেছেন, সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান সাবেক সভাপতি, সভাপতি প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম হাফিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, একক সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আমি নিজেই যোগ্য প্রার্থী। তিনি ঐক্য আছে বলে দাবি করেছেন। তবে একক প্রার্থী কে হচ্ছেন তা বলেননি। ভোটগ্রহণের শেষাংশে ঐকের একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতে পারে। প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঐক্য থেকে সরে এসেছি। কারণ সংগঠনের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে এককভাবে বিজয়ে আশা নিয়েই এগুচ্ছি। ইউনিয়নের ৬ বার নির্বাচিত সভাপতি আজিজুল হকের ছেলে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ ফিরোজ আহেম্মদ সুবজের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এবারের নির্বাচনে ইউনিয়নের ২৫টি পদের মধ্যে ২নং ওয়ার্ড সদস্য পদে রমজান আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- তৈয়ব আলী (বাইসাইকেল), হাফিজুল ইসলাম (আনারস), মোস্তাফিজুর রহমান (ছাতা) ও ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ (চশমা) প্রতীকে। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন ৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (হারিকেন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ (চাঁদতারা) ও আতাউর রহমান (মই) প্রতীকে। সহসভাপতি পদে মাঠে রয়েছেন, ইদ্রিস আলী (মোমবাতি), জয়নাল আবেদীন (হাতি), জুলফিকার হায়দার (কলস), ফারুক আহম্মেদ (তালাচাবি), রেজাউল করিম (কাপপিরিচ) ও শফিকুল আলম (টেবিল)। সহসাধারণ সম্পাদক পদে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন, আতিয়ার রহমান (চেয়ার), আসাদুল হক ব্যাকা (বেলচা), আ. রব বাবু (দোয়াত-কলম), আব্দুল হান্নান (মোরগ), ইসমাইল হোসেন (হাঁস), খবির উদ্দিন (মাছ), জয়নাল আবেদীন (তলোয়ার), নাসির উদ্দিন (হাতপাখা) ও বাবুল আক্তার (কলম)। ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে আয়ুব আলী সন্টু (ডাব) ও সালাহ উদ্দিন শাহ (বাল্ব)। ২নং ওয়ার্ডে রমজান আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ৩নং ওয়ার্ডে সানোয়ার হোসেন (বালতি) ও সমির কুমার সরকার (ডাব)। ৪নং ওয়ার্ডে আবুল কাশেম (বালতি), বাবর আলী (ডাব) ও বিল্লাল হোসেন (বেলচা) প্রতীক। ৫নং ওয়ার্ডে আজিজুল হক (ডাব), বিল্লাল হোসেন (হাতুড়ি) মনিরুল ইসলাম (বালতি)। ৬নং ওয়ার্ডে শ্রী গোবিন্দ কুমার হালদার (বালতি), মঈনউদ্দিন লিটন (বাল্ব), মজিবর রহমান (ডাব), রবিউল ইসলাম (হাতুড়ি), শামীম হোসেন (বেলচা) ও হাফিজুর রহমান (আখেরআঁটি)। ৭নং ওয়ার্ডে আকরাম আলী (কাঁঠাল), আমিনুল ইসলাম (হাতুড়ি), আরিফ (ডাব), মফিজুর রহমান (বেলচা), মামুন আহম্মেদ (আখেরআঁটি), মোহাম্মদ আলী (বাল্ব) ও শফিকুল আলম (টর্চলাইট)। ৮নং ওয়ার্ডে আব্দুল কুদ্দুস (টর্চলাইট), একরাম আলী (আখেরআঁটি), বাবুল আক্তার (হাতুড়ি), শরিফুল ইসলাম (মোটরগাড়ি) ও শাহআলম (ডাব)। ৯নং ওয়ার্ডে একরামুল হক (বালতি), এএসএম কবির (আখেরআঁটি) ও সাহেব আলী শিকদার (ডাব)। ১০নং ওয়ার্ডে আব্দুর রহমান (বেলচা), ইয়ামিন হক (আখেরআঁটি), মতিয়ার রহমান (বালতি) ও সিরাজুল ইসলাম (ডাব) এবং ১১নং ওয়ার্ডে আব্দুল আজিজ (ডাব), আব্দুর রাজ্জাক (আখেরআঁটি) ও শফিকুল ইসলাম (হাতুড়ি) প্রতীকে। কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যবিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ২শ ৬ জন ভোটার গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে কেরুজ হাইস্কুলকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণসভার পর থেকেই কেরুজ এলাকাসহ সর্বত্র তিন নেতার ঐক্যের যে কথা শোনা যাচ্ছিলো তা ভেস্তে গেছে। তৈয়ব আলীকে ঠেকাতে তিন নেতার ঐক্য ভেঙে যাওয়ায় তৈয়ব আলীর জয়ের পাল্লা ভারী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে অনেকেই। সভাপতি প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ এককভাবে বিজয়ের লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছাড়াও অন্যান্য পদপ্রার্থীরা বিজয়ের মালা গলায় পড়তে অবিরাম প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। এ নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ৪ জনই এককভাবে ভোটযুদ্ধে লড়লে লড়াই হতে পারে দ্বিমুখি। সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও ২ জন প্রার্থীর মধ্যে হবে মূল লড়াই। এখন দেখার অপেক্ষামাত্র কে কে পড়েন বিজয়ের মালা। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব আকুল হোসেন, সদস্য আব্দুল ফাত্তাহ, আকরাম হোসেন শিকদার ও আব্দুস সালাম রয়েছেন। মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ।