কেরুজ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীদের দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের

দিন হাজিরার নিরাপত্তাকর্মীরা চিনিকলের কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ পাহারা দিচ্ছে
দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের নিরাপত্তা বিভাগের অবস্থা হযবরল। চাকরির নেই কোনো স্থায়িত্ব। দিন হাজিরায় কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীদের দিন কাটে অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে। যতই দিন যাচ্ছে স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা ততোই কমছে। বর্তমানে ৮ জন স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও চলতি বছরের শেষের দিকে কমবে আরও দুজন। শ শ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষার্থে নিরাপত্তা বিভাগকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। বাড়ানো দরকার লোকবল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহতম জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এতদ্বা অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ঐতিহবাহী কেরুজ চিনিকলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। কেরুজ এ কমপে¬ক্সের ৪টি বিভাগের মধ্যে রয়েছে ডিস্টিলারি, চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও ফার্মাসিটিক্যাল বিভাগ। মিলটি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কতোজন নিরাপত্তা কর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন তার সঠিক হিসাব না জানা গেলেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১ শ ২০ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত ছিলো। পাশাপাশি মিল এলাকায় ছিলো আনসার ক্যাম্প। এর পর থেকে প্রতি বছরই নিরাপত্তা কর্মী অবসরে গেলেও ওই পদে কোনো লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি বহুদিন থেকে। যে কারণে লোকবল কমে বর্তমানে এসে দাড়িয়েছে ৫৯ জনে। এর মধ্যে স্থায়ী চাকরিজীবী ১৩ জন। এদের মধ্যে ১ জন নিরাপত্তা ইন্সপেক্টর, ৩ জন হাবিলদার ও ৯ জন প্রহরী। চলতি বছরের ডিসেম্বরে আরও দুজন প্রহরী অবসর গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে ৯ জনের স্থলে কমে দাড়াবে ৭ জনে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই কমছে স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা। আগামী ২-৪ বছরে ৭ জনের প্রায় সকলেই অবসরে যাওয়ার কারণে কোনো স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী থাকবে না। ফলে দিনহাজিরার নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়েই মিলের শ শ কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ পাহারা দেয়াতে হবে। চুক্তিভিত্তিক (দিনহাজিরায়) নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে ৪৬ জন। এদের মধ্যে ১ জন মারা যাওয়ায় বর্তমানে রয়েছে ৪৫ জন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চিনিকলকে সেটাপ সংশোধন করায় নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগে সমস্যা দেখা দেয়। সে থেকেই এ বিভাগে স্থায়ী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৪৫ জন নিরাপত্তাকর্মীদের চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেড়বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১৬৭ একর সম্পত্তির এ বিশাল এলাকায় নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা মাত্র ৫৫ জন। এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ১ জন নিরাপত্তা অফিসার, ১ জন ইন্সপেক্টর ও ৩ জন হাবিলদার। ৩ জন হাবিলদারের মধ্যে হাবিলদার আবুল কাশেম চলতি বছরের ডিসেম্বরে অবসর গ্রহণ করবেন। কেরুজ চিনিকল এলাকার মধ্যে রয়েছে ১৪টি গেটসহ গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য পয়েন্ট। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১ জন করে হলেও ৩ শিফটে প্রয়োজন প্রায় ৯০ জন নিরাপত্তাকর্মী। এছাড়া মিলের গুরুত্বপূর্ণ অফিস, ভবন ও আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থার দায়িত্বভার বহন করতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদেরই। যার কারণে বিঘিœœত হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
অনেকেই বলেছে, মিলের দায়িত্বপূর্ণ এ কাজের জন্য নিরাপত্তা বিভাগকে ঢেলে সাজানো উচিত। এ ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা সদস্যদের চাকরি স্থায়ীকরণ হলে তাদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হবে দায়বদ্ধতা। এছাড়া একজন স্থায়ী নিরাপত্তা সদস্যের তুলনায় চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের বেতন ভাতা প্রায় অর্ধেক। অথচ শ্রমের ক্ষেত্রে কারো চেয়ে কারো কমতি নেই। নিরাপত্তা সদস্যরা কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের অন্তর্ভুুক্তি না হওয়ায় তাদের দাবি তুলে ধরার নেই কোনো ব্যবস্থা। কেরুজ চিনিকল এলাকায় অপরিকল্পিভাবে আবাসিক কোয়ার্টার গড়ে ওঠার কারণে নিরপত্তা বিধানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের হিমসিম খেতে হয়। মূল্যবান এ সম্পদ রক্ষায় নিরাপত্তা বিভাগকে লোকবল বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে আরও শক্তিশালী করা দরকার বলে সচেতন মহল মনে করছে।
কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। যা আছে তার চেয়ে কম হলেও ভালোভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালানো সম্ভব। ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, মিলের নিরাপত্তা বিভাগ ভালোভাবেই চলছে। নিরাপত্তা অফিসার নুরুল হাসান জানান, হয়তো এক সময় স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী থাকবে না। সেটাপের কারণে নতুন করে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়দের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে অস্থায়ীভাবে নেয়া হলেও ভবিষ্যতে নিরাপত্তাকর্মীদের নেয়া হবে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। নিরাপত্তা ইন্সপেক্টর গিয়াসউদ্দিন পিনা বলেছেন, মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।