কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিল্প সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকল পরিদর্শন করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে যশোর বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহরযোগে দর্শনা কেরুজ চিনিকলের অতিথি ভবনে পৌঁছান। এ সময় জেলা আ.লীগ ও কেরুজ চিনিকলের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ সংবর্ধনা দেয়া হয়। পুলিশের একটি চৌকস দল মন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে মন্ত্রী আমির হোসেন আমু অতিথি ভবনে সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়সহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিএনপির উদ্দেশে বলেন, সরকারের অধীনে যদি তারা উপজেলা নির্বাচনে আসবে তাহলে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে কেন এতো সহিংসতা দেখালো? সংখ্যালঘু ও পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলাকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি যখন অংশ নেবে তখন কিন্তু তারা আর প্রধান বিরোধীদল হিসেবে থাকবে না। এখন প্রধান বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। গতকাল শনিবার দুপুরে দেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। কেরুজ চিনিকলসহ দেশের অন্য সকল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলের অসঙ্গতি দূর করে ঢেলে সাজানো হবে বলেও জানান শিল্পমন্ত্রী।

বিরোধীদলের ওপর সরকারি দমন-নিপীড়ন চলছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার জবাবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, যারা দেশের নিরীহ, সংখ্যালঘু ও পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে তারা যদি বিএনপি কিংবা তাদের লোক হয় তাহলে সরকার দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের জন্যই কেরু অ্যান্ড কোম্পানিসহ বিভিন্ন কল-কারখানা ভর্তুকি দিয়ে চালু রেখেছে বর্তমান সরকার। তবে লোকসানের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান শিল্পমন্ত্রী।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দলের নেতাকর্মী ও মিলের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কেরুজ চিনিকলের চিনি কারখানা, ডিস্টিলারি কারখানা, আকন্দবাড়িয়া সারকারখানাসহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। আকন্দবাড়িয়া সার কারখানায় বৃক্ষরোপণ করা হয়। পরিদর্শনকালে তিনি মিলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। কুশল বিনিময় করেন শ্রমিক-কর্মচারীদের সাথে। পরিদর্শন শেষে মিলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে করেছেন সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়। পরিদর্শন ও মতবিনিময়কালে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, যুগ যুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। কৃষিবান্ধব এ সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তেমনিভাবে দেশের চিনি শিল্পকে বাঁচাতে হলে চাষি ভাইদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি করে আখচাষের মধ্যদিয়েই সম্ভব দেশের এ মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা। বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় এসেছিলো, তারা কখনো ভাবেনি এ দেশের কৃষকের কথা, ভাবেনি শ্রমিকের কথা, ভাবেনি দেশের মেহনতি মানুষের কথা। তারা দেশের সম্পদ নষ্ট করে নিজের আখের গুছিয়েছে। তারাই দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিলো। বন্ধ করে দিয়েছিলো দেশের অনেক শিল্প-কলকারখানা। বেকার করেছিলো বহু শ্রমিক-কর্মচারীকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে বেকারত্ব ঘুচাতে বর্তমান সরকার দেশের মৃত ও রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধার করে তা সচল করেছে। সেই সাথে শিল্প-কারখানাগুলোর ব্যাপক উন্নয়ক করা হয়েছে। আগামীতে এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসুন সকল অনিয়ম, দুর্নীতিকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি শিল্প সমৃদ্ধশীল হিসেবে গড়ে তুলি। সেক্ষেত্রে মিলের সকল কর্মচারী-কর্মকর্তাকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে। কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন ও মতিবিনময়কালে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সাথে ছিলেন হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুল, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, শিল্প সচিব মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক ভূইয়া, পরিচালক (অর্থ) একেএম দেলোয়ার হোসেন, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আমিনুল হক, পরিচালক (উৎপাদন ও প্রকৌশল) আবুল কাশেম, করপোরেশনের সচিব কেরুজ চিনিকলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম আবদার হোসেন, পরিচালক (পরিদর্শন ও তদন্ত) শামসুল কবির, প্রধান রসায়নবিদ কামরুল হাসান মামুন, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বেগম আঞ্জুমান আরা, পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন, এনডিসি মোখলেসুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিবুর রহমান, মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, রেইন উইকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, কেরুজ চিনিকলের ৫ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের মধ্যে ছিলেন- সুরেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, আব্দুল কাইয়ুম, মোস্তফা কামাল, ইউসুফ আলী শিকদার, মোশারফ হোসেন, মিলের ডিস্টিলারি সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স প্রমুখ। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিকেলে দর্শনা কেরুজ ক্লাব মাঠে আ.লীগের কর্মীসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষন দেন। এ সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে গাড়িবহরযোগে যশোর বিমানবন্দরের উদ্দেশে দর্শনা ত্যাগ করেন।