কেরুজ চিনিকলের গুদামে অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে ৩৫ কোটি টাকার চিনি

কেরুজ চিনি কিনে চিনি শিল্পকে রক্ষার আহ্বান

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: কেরুজ চিনিকলের গুমামে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার চিনি। দেশের বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত চিনির তুলনায় কেরুজ উৎপাদিত চিনির মূল্য বিস্তর ফারাক থাকায় অবিক্রিত রয়েছে। কেরুজ চিনিকলের গুদামে মজুদকৃত চিনির পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন। সরকারের নির্ধারিত দর অনুযায়ী এ চিনির বর্তমান মূল্য  প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাংলাদেশের শীর্ষ বেসরকারি সাত চিনি রিফাইনারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না সরকারি চিনিকলগুলো। সিন্ডিকেটের উৎপাদিত চিনি ঝরঝরে-ঝকেঝকে ও দামে কম হওয়ায় বাজার দখল করে নিয়েছে। কেরুজ উৎপাদিত চিনি মিষ্টি বেশি হলেও অতিরিক্ত দামের কারণে বিক্রি হচ্ছে না। যে কারণে ডিলাররা কেরুর চিনি তুলছে না এবং খুচরা বাজারে বিক্রিও হচ্ছে না। এদিকে বাজারমূল্যে অনেক ফারাক থাকায় ডিলাররা চিনি উত্তোলন না করায় বিপুল পরিমাণ চিনি নিয়ে বিপাকে পড়েছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বর্তমান বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি চিনিকলগুলোর চিনির মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করা না হলে চিনিকলগুলোতে বর্তমানে মজুদ বিপুল পরিমাণ চিনি বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কেরুজ চিনিকলে ২০১১-১২ আখ মাড়াই মরসুমে চার হাজার তিনশ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। ২০১২-১৩ আখ মাড়াই মরসুমে চিনিকলটি চার হাজার নয়শ ৫১ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে। দুটি মরসুমে চিনিকলটি সর্বমোট চিনি উৎপাদন করে নয় হাজার ২৩৫ দশমিক ১০ মেট্রিক টন।  দু মরসুমের চিনিই মিলের গুমামে রয়েছে অবিক্রি অবস্থায় পড়ে। এ চিনি কোনো ডিলার না তুললেও সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের দেশবন্ধু রিফাইনারি মিল দু হাজার ১৫০ মেট্রিক টন ও মেহেরপুর পুলিশ লাইনসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৪২ মেট্রিকটন চিনি উত্তোলন করেছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট বিক্রি হয়েছে মাত্র দু হাজার ২৯২ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন। এখনো ছয় হাজার ৯৪২ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন চিনি কেরুজ গুদামে অবিক্রিত রয়েছে। এদিকে বিপুল পরিমাণ চিনি দীর্ঘদিন গুদামে পড়ে থাকায় আদ্রতা কমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চিনির মান খারাপ হতে পারে। এ ব্যাপারে দর্শনার চিনির ডিলার আবেদ আলী, আব্দুল খালেক ও আব্দুর রহিম  জানান, বর্তমানে বেসরকারি চিনি ৫০ কেজির বস্তা দু হাজার ১শ টাকা বাজারে বিক্রি হলেও কেরুর চিনির সরকার নির্ধারিত মিল গেটের দাম দু হাজার পাঁচশ টাকা। খুচরা দাম প্রতিকেজি কমপক্ষে ৫৫ টাকা হারে বিক্রি করতে হবে। এছাড়াও কেরুজ চিনির রং কিছুটা লালচে হওয়ায় এ চিনি ক্রেতাদের মধ্যে কেনার আগ্রহ কম। বাজারে রিফাইনারি চিনিকলের উৎপাদিত চিনি ধবধবে শাদা এবং দামেও কম, ক্রেতাও বেশি। বরাদ্দ থাকলেও নিশ্চিত লোকসানের আশঙ্কায় চুয়াডাঙ্গার প্রায় ১০ জন ডিলার ও সাতজন থানা ডিলার কোনো মাসেই চিনি উত্তোলন করছেন না। এছাড়া দেশের ৬৭ জন থানা পরিবেশককেও এ চিনিকল থেকে চিনি উত্তোলন করতে দেখা যাচ্ছে না। এ চিনিকলের উৎপাদিত চিনির গুণগত মান তুলনামুলকভাবে ভালো হওয়ার পরও বেসরকারি রিফাইনিং মিলগুলো মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে কমদামে বাজারে চিনি বিক্রি করছে। ফলে বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ব চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনির ক্রেতা নেই বলেলেই চলে।

কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিপুল পরিমাণ মজুদ চিনি সময় মতো বিক্রি করা না গেলে কিছুটা অর্থ সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে মিল কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও আগামী মাড়াই মরসুমে চিনি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুখিন হতে পারে। চিনি শিল্পকে বাঁচাতে চিনি ক্রেতা, ডিলার ও এলাকাবাসীর প্রতি কেরুজ উৎপাদিত চিনি কেনার আহ্বান জানিয়েছেন সুদর্শন মল্লিক। এদিকে সচেতনমহল বলেছেন, রিফাইনারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সরকারি চিনিকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি পদক্ষেপ জরুরি। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ চিনিকলটিতে চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৯০ দশকের পর থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসানের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।