কেরানীগঞ্জে ফ্ল্যাটে দু শিশুসহ চারজনের লাশ

স্টাফ রিপোর্টার: লাল রঙের কাপড় দিয়ে ছেলেশিশুটির হাত-পা বাঁধা। ছেঁড়া কাপড়ে বাঁধা মুখ। একই কাপড়ে বাঁধা রয়েছে পাশের পুরুষটির পা। ওড়না দিয়ে পিছমোড়া করে তার হাত ও মুখ বাঁধা। পুরুষটির পরনে কোনো কাপড় ছিলো না। ‘দ’ আকৃতির (হাঁটু ভেঙে) হয়ে মেঝেতে পড়েছিলো তার লাশ। তার সামনের দিকে লাল কাপড়ে বাঁধা ওই শিশুটি এবং পেছনের দিকে দেয়াল ঘেঁষে আরেকটি মেয়েশিশু বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরের পূর্ব দিকে দেয়াল ঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণে চিৎ হয়ে পড়ে আছেন এক নারী। পরনে লাল-সবুজ ছাপা কাপড়। তার হাতও পিছমোড়া বাঁধা। লাশের পাশেই কাঠের একটি খাট কাত করে তুলে রাখা। পুরো ঘরে ছড়ানো-ছিটানো ছিলো জামাকাপড়, খালি বোতল আর তোশক।

এ দৃশ্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর কদমপুর গ্রামের ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের। বুধবার ওই ফ্ল্যাট থেকে দু শিশুসহ ওই চারজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছেলেশিশুটির বয়স আনুমানিক ৬ বছর। মেয়েশিশুটির বয়স ২ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, পুরুষটির বয়স ৩২ বছর আর নারীর বয়স ২৮ বছর। তবে এদের একে অপরের সম্পর্ক কী- তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের ধারণা, নিহত পুরুষ ও মহিলা স্বামী-স্ত্রী এবং শিশু দুটি তাদের সন্তান। তবে তাদের নাম-পরিচয় কিছুই জানা যায়নি। ওই বাসায় থাকা অপর দুজন পুরুষ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। বাড়ির কেয়ারটেকার সোহেলসহ দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ২-৩ দিন আগে শ্বাসরোধে ওই চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ পচে ফুলে গেছে। বাড়ির কেয়ারটেকার সোহেল ও তার পরিচিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আক্কাসকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাসা থেকে মোমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সাজু আহমেদ নামের একজনের ড্রাইভিং লাইসেন্স, মাদক সেবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, খালি বোতলসহ কাপড়চোপড় জব্দ করেছে পুলিশ।