কেন্দ্রথেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সরকারি সব দফতরে চালু হচ্ছে ডিজিটাল অফিসপদ্ধতি

 

 

স্টাফ রিপোর্টার:কেন্দ্রথেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সরকারি সব দফতরে চালু হচ্ছে ডিজিটাল অফিসপদ্ধতি। ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হবে নোটিং, ফাইলিং ও স্বাক্ষরসহনথির যাবতীয় কার্যক্রম। নতুন এ পদ্ধতির মাধ্যমে ছুটির দিন অথবা বিদেশেবসেও অতি জরুরি নথিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা।এমনকিইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মনিটরিং হবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে হাজিরা। এতেকেউ বিলম্বে অফিসে হাজির হলে, সেটিরও রেকর্ড থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্টদেরমধ্যে পত্র প্রেরণ-গ্রহণ, আবেদন ও সেবা প্রদানসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ ইমেইল, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্স এবং অডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

এদিকে পাবলিক সার্ভিস ডে আজ। এদিনে পাবলিক সার্ভিস উইক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করবেন। সার্ভিস উইক উদ্বোধন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় শোভাযাত্রা, আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

সচিবালয়নির্দেশমালা-২০১৪ অনুযায়ী পরিচালিত হবে উল্লিখিত ইলেকট্রনিক নথিব্যবস্থাপনা। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে নির্দেশমালাটির ছাপার কাজচলছে। সরকারি দফতরগুলোতে বিতরণের পর খুব শিগগিরই এটি কার্যকর হবে। এতেকর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ জনপ্রশাসনেরসামগ্রিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে মন্তব্য সরকার সংশ্লিষ্টদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীবলেন, নতুন সচিবালয় নির্দেশমালা অনুমোদনের পর বই আকারে ছাপাতেবিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বই আকারে ছাপাও হয়েছে। শিগগিরই তাসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিতরণ করার মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রথমবারের মতো ১৯৭৬ সালে সচিবালয় নির্দেশমালা প্রণয়ন করা হয়। এর ৩২ বছরপর ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জারি করে এনির্দেশমালা। এটি যুগোপযোগী করতে ২০১৩ সালের ২২ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরঅতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেতৎকালীন মহাজোট সরকার। এ কমিটি নতুন নির্দেশমালার সুপারিশ করে। বিদ্যমানসচিবালয় নির্দেশমালায় ২৮৭টি নির্দেশ থাকলেও নতুনটিতে স্থান পেয়েছে ২৬৩টি।বিদ্যমান নির্দেশমালা থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে ৩৩টি নির্দেশ। এছাড়া একেবারেইনতুনভাবে সংযোজন হয়েছে নয়টি নির্দেশ, ১৩টি উপ-নির্দেশ ও একটি অধ্যায়।সংশোধন করা হয়েছে ৯০টি পুরনো নির্দেশের।
সচিবালয় নির্দেশমালার খসড়াপ্রণয়ন কমিটির প্রধান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলীমোল্লা বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিবকমিটি নির্দেশমালাটি অনুমোদনের পর তা প্রিন্ট করতে দেয়া হয়েছে। এটি কার্যকরহলে অফিস ব্যবস্থাপনায় আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন। প্রশাসনের গতি বাড়বেআরও কয়েকগুণ।

নতুন সচিবালয় নির্দেশমালায় সরকারি সব দাফতরিক কাজে তথ্যআদান-প্রদানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ই-সার্ভিস সুবিধা। বাধ্যতামূলক করাহয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কিং। কাগুজে ফাইলে রেকর্ডসংরক্ষণের পাশাপাশি ডিজিটাল ফাইল সংরক্ষণে ব্যাকআপ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে।নাগরিক সেবা প্রদানসংক্রান্ত একটি নতুনঅধ্যায় সংযোজন করে তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্থদফতর, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জনগণকে আরও উন্নততর সেবাদানসহ সরকারের স্বচ্ছতানিশ্চিতকরণের জন্য সেবাদান প্রতিশ্রুতি প্রণয়ন করবে। তা ওয়েবসাইটে প্রচারসহপ্রকাশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি সব সরকারি দফতরে সেবা ডেস্কস্থাপন, নাগরিকদের মতামত গ্রহণ ও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

সচিবালয়েগাড়ি প্রবেশ প্রসঙ্গে নতুন নির্দেশমালায় বলা হয়েছে, সচিবালয়ে গাড়িগুলোরপ্রবেশ, বাহির ও পার্কিং স্বয়ংক্রীয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাথাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান এবংসংস্থার গাড়িতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেশিন রিডেবল বিশেষ ধরনের স্টিকারথাকতে হবে।সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪ তে সংযোজন করা হয়েছে ভিডিওকনফারেন্সিং পদ্ধতি। এতে সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত তৈরি করেসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।ডিজিটাল পদ্ধতিতে অতি গোপনীয়, বিশেষ গোপনীয় এবং গোপনীয়, সীমিত পত্রাদিচেনার জন্য ইলেকট্রনিক সংকেত সংযোজন করা হয়েছে। অতি জরুরি ক্ষেত্রে মোবাইলফোনে ভয়েস কল এবং এসএমএস প্রেরণ ব্যবস্থাও সংযোজন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতেওপ্রাপ্তি স্বীকারের ব্যবস্থা থাকবে। রেকর্ড সংরক্ষণে ব্যবহার করা হবেইলেকট্রনিক ডাটা সেন্টার। ডাটা সংরক্ষণে চার স্তরবিশিষ্ট ব্যাকআপ স্থাপনকরা হচ্ছে।

নতুন নির্দেশমালায় বলা হয়েছে, কাগজপত্রবলতে কোনো বিষয়েরহার্ডকপি বা ইলেক্ট্রনিক কপির সমষ্টিকে বুঝাইবে। কারণ বর্তমানে কাগজপত্রবলতে প্রিন্ট কপিকে বুঝায়। এক্ষেত্রে সরকারি সব দফতরে ইলেক্ট্রনিক নথিব্যবস্থাপনার জন্য একই প্লাটফর্মের সফটওয়্যার ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।তাতে আরও বলা আছে, ‘কাস্টমাইজড সফটওয়্যার ব্যবহার এবং প্রতিটিমন্ত্রণালয়/বিভাগে একটি গবেষণা ও উদ্ভাবন কোষ স্থাপন করা হবে। নতুননির্দেশমালার ১৫ (১) (ক)-এ সচিবালয়ের প্রতিটি শাখা/দফতরের সম্ভাব্য সব কাজেপর্যায়ক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করারকথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর আওতাধীন সবপ্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার বাংলা ও ইংরেজিতে নিজস্ব ওয়েবসাইট বাধ্যতামূলক করারকথা উল্লেখ করে নতুন নির্দেশমালায় বলা হয়েছে, এ ওয়েবসাইটে তথ্য অধিকার আইনঅনুযায়ী সব তথ্য সংযোজন করতে হবে। এতে প্রতিটি শাখা ও দফতরের হালনাগাদতথ্য, ফরম, রিপোর্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবহারসংক্রান্তপ্রয়োজনীয় বিধিবিধান নিয়মিত হালানাগাদ থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনেইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতেও চিঠিপত্র পাঠানোর সুযোগ রেখে ৭৩ (৯) ধারায় বলাহয়েছে, ‘এ ক্ষেত্রে প্রাপকের মোবাইল ফোনে ভয়েস কল/এসএমএস প্রেরণ করতে হবে।কোনো ই-নথি বিনষ্ট করার আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক করাহয়েছে।

এদিকে পাবলিক সার্ভিস সপ্তায় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। গতকাল ছিলো রচনা প্রতিযোগিতা। আজ শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা। জেলা প্রশাসকের কক্ষে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বাতায়ন উদ্বোধন করবেন। তা টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। আজই পুরষ্কার বিতরণী। আগামী কাল জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়। ২৫ জুন ইউআরএসসির উদ্যোগতাদের সাথে মতবিনিময়সভা, ২৬ জুন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কর্মচারীদের মতবিনিময়। ২৮ জুন সুধী সমাজের সাথে মতবিনিময়সভা ও সপ্তাহ পালনের সমাপনী।