কুয়েতি জিন ভর করা রোজিনার দাওয়ায়ে একজনের মৃত্যু : ক্ষুব্ধ জনতা ধরে দিলো পুলিশে

 

 

দিনমজুরের ভিটে হাতানোর ষড়যন্ত্র : প্রবাস ফেরত মুকুলের প্ররোচণায় গাছড়ার বটিকা প্রয়োগে হত্যা!

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: কুয়েতি জিন ভর করা দামুড়হুদা বিষ্ণুপুরের রোজিনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রবাস ফেরত অর্থশালী প্রতিবেশী মুকুলের ষড়যন্ত্রে রোজিনার দেয়া গাছড়ার বটিকা সেবনে গ্রামেরই হতদরিদ্র আনছার আলী মারা গেলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাকে আটক করে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় দামুড়হুদা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

দিনমজুর আনছার আলীর (৪৮) ছেলে সুজন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় হত্যামামলার প্রক্রিয়া করেন। আনছার আলীর মৃতদেহ আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নতদন্ত করা হবে। পুলিশ এ তথ্য দিয়ে বলেছে, আনছার আলীর দেহে বাসা বাধা সকল রোগ ভালো হয়ে যাবে বলে ভণ্ড রোজিনা বটিকা দেন। সেই বটিকা সেবনের তিনদিনের মথায় গতকাল শনিবার বিকেলে মারা যান আনছার আলী। গ্রামের সাধারণ মানুষ ফুঁসে ওঠে। রোজিনাকে ঘেরাও করে। এ সময় রোজিনা গ্রামবাসীর সামনে তার সব অপকর্মের কথা স্বীকার করে বলেছেন, গ্রামেরই প্রবাস ফেরত মুকুলের প্ররোচণায় আনছার আলীকে পাগল করে দেয়ার জন্য বটিকা দেন। সেই বটিকা সেবনে আনসার আলী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। রোজিনার কথা মতো তাকে চিকিৎসকের নিকটও নেয়া হয়নি। ফলে চিকিৎসার নামে গাছড়ার বটিকা সেবন করিয়ে আনছারকে হত্যা করেছেন রোজিনা। রোজিনাসহ মুকুলকেও হত্যামামলায় আসামি করা হচ্ছে।

মুকুলের প্ররোচণা কেন? গ্রামের সাধারণ জনগণ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে, বিষ্ণুপুর উত্তরপাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আনছার আলী হতদরিদ্র। তার প্রতিবশী লস্করের ছেলে মুকুল প্রভাবশালী। প্রবাস ফেরত। দিনমজুর জলিলের ভিটে হাতিয়ে নেয়ার জন্যই তাকে অসুস্থ করানোর জন্য রোজিনাকে গাছড়ার ওষুধ দিতে বলেন। একই সাথে আনছারের শরীর থেকে সকল প্রকারের রোগ দূর করানোর জন্য রোজিনার নিকট চিকিৎসা নেয়ার জন্যও কৌশলে উদ্বুদ্ধ করেন মুকুল। আনসার আলী ভণ্ড কবিরাজ রোজিনার নিকট গেলে তিনি গাছড়ার বটিকা দেন। তিনদিন আগে ওই বটিকা সেবনের পর আনছার আলী অসুস্থ হয়ে পড়েন। আনছারের পরিবারের সদস্যরা একইপাড়ার ভণ্ড কবিরাজ রোজিনার নিকট গেলে রোজিনা বলেন, জিনের দেয়া ওষুধ খেলে প্রথমে ওরকম হয়। ঠিক হয়ে যাবে। দু দিন ধরে একই উক্তি আওড়ান রোজিনা। অবশেষে শনিবার বিকেলে মারা যান আনসার আলী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রোজিনাকে ঘেরাও করে। এ সময় গ্রামের সাধারণ মানুষের সামনে মুকুলের ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, মুকুল ৫শ ১ টাকা দেয়। ওই টাকার বিনিময়ে ওর কথা মতো আমি গাছড়ার ওষুধ দিয়েছিলাম।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কোষাঘাটার আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে রোজিনার সাথে পার্শ্ববর্তী পীরপুরের আব্দুল জলিলের বিয়ে হয়। আনুমানিক ১৯ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। আনুমানিক ১০ বছর ধরে রোজিনা তার স্বামীগৃহে আস্তানা গড়ে তোলেন। প্রচার করে তার ওপর কুয়েতি জিন ভর করে। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার জিন ভর করে বলে নাটক করতে থাকেন। তার পক্ষে কয়েকজন মহিলাসহ বেশ কয়েকজন পুরুষ প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকে। এলাকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য রোজিনার দরবারে ভিড় জমাতে থাকে। গতকাল তার আস্তানার সচিত্র প্রতিবেদন দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। রোজিনা খাতুন কুয়েতি জিন সেজে ভণ্ডামির সময় কুয়েতি জিনের নাম জয়নাল মণ্ডল বলে জানান। এ সময় কুয়েতের একটি শহরের নাম বলতে বললে ভণ্ডামি থেমে যায়। এ নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশের দিনই তার দেয়া বটিকায় মারা গেলেন দিনমজুর আনছার আলী। তাকে হত্যার অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতার মাঝ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোজিনার বটিকা সেবনে মারা যাওয়া আনছার আলীর এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সুজন বাদী হয়ে মামলার প্রক্রিয়া করেন। গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা লেখার কাজ চলছিলো। মামলায় মুকুলকেও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আসামি করার কথা জানান শোকার্ত সুজন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন, আমার আব্বাকে যারা ষড়যন্ত্র করে হত্যা করলো তাদের বিচার হবে তো! অপরদিকে রোজিনাকে দামুড়হুদা থানা কাস্টডিতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এ সময়ও রোজিনা কুয়েতি জিন তার ওপর কবে থেকে কীভাবে ভর করে তার মনগড়া কাহিনি বলতে থাকেন। মনগড়া গল্প শুনে পুলিশ সদস্যদেরও কেউ কেউ তা বিশ্বাস করে বলে, বলা তো যায় না, জিনে আবার কি করতে কি করে!

রোজিনা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। বলেছে, যখন ক্লাস থ্রি’তে পড়তাম, তখনই জিন আমার ওপর ভর করে। জিনের কথা মতোই চিকিৎসা দিয়ে থাকি। কতোজনেরই তো সুস্থ করেছি। ভিসা? জবাব না দিয়ে নীরব থেকে বলেন, আমাকে বেশি জ্বালিয়েন না, আমি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ কথা শোনার পর জানতে চাওয়া হয় কীভাবে বুঝলেন? রোজিনা বললেন, ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আল্ট্রাসনো করে জেনেছি ছেলে হবে। নিজের ওপর ভর করে জিন, বহু লোকের চিকিৎসা দেন আর আপনিই গেলেন ডাক্তারের কাছে? মাথাটা নিচু করে রোজিনা বলেন, কবিরাজি আর করবো না। আমাকে বাঁচান।

উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুর উত্তরপাড়ার আব্দুল জলিলের স্ত্রী দু কন্যার জননী। আব্দুল জলিল প্রথমে ছিলেন দিনমজুর। রোজিনা জিনের কথা বলে ভণ্ডামি শুরু করলে আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ে। স্বামীকে করিমন কিনে দেন রোজিনা। দু বছর আগে তা বিক্রি করে এখন পানবরজ নিয়েই থাকেন জলিল।