কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবি : ১০ জনের লাশ উদ্ধার

 

 

দৌলতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকার ২৩ জন আরোহীর মধ্যে ১১ জনকে নৌকা ডুবির সময় জীবিত উদ্ধার করা হলেও নারী ও শিশুসহ ১২ জন নিখোঁজ হয়।গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ ১২ জনের মধ্যে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঈদের দিন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বৈরাগীরচর খেয়াঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীতে এ নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। সকলের বাড়ি উপজেলার ফারাকপুর, গঙ্গারামপুর ও বৈরাগীরচর গ্রামে। এখনো তিন্নি ও কেয়া নামে দু শিশু নিখোঁজ থাকায় তার সন্ধানে ডুবুরিরা কাজ করছে।

খুলনা থেকে আসা ৮ সদস্যের ডুবুরি দলের নেতা কাজী নাদির হোসেন জানান, গত বুধবার সকাল থেকে তারা মাঝ পদ্মায় অভিযান চালালেও ডুবে যাওয়া নৌকা বা নিখোঁজ কাউকে খুজে পায়নি। এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার ভাটিতে ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা পাথরঘাটা এলাকা থেকে তল্লাশি শুরু করে ডুবুরিরা। বুধবার রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা এলাকায় গড়াই নদী থেকে গঙ্গারামপুর গ্রামের ওয়াহিদুল ইসলামের মেয়ে মথুরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পলি খাতুনের (২৬) লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে মরার চর, ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা পাথরঘাটা, তালবাড়িয়া, কুমারখালী ও খোকশা এলাকায় পদ্মা নদীতে তল্লাশি চালিয়ে আরো ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরা হলো- ফারাকপুর গ্রামের মওলা বক্সের ছেলে শিপন (৩০), আবু বক্করের মেডিকেল পড়–য়া মেয়ে ডা. বিভা (২৩), তোজাম্মেলের ছেলে স্বপন (২৫), মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে সাহাজুল (২৮), গঙ্গারামপুর গ্রামের বাবুর মেয়ে বিথী (১৫) ও সুবর্ণা (৮), বৈরাগীর চরের মিঠুনের স্ত্রী শিখা (২২), জামাল উদ্দিনের ছেলে কালু (২৮) ও ইমারুলের ছেলে ইমরান (১০)। স্বজনদের আহাজারি ও ক্রন্দনে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

এখনও গঙ্গারামপুরের নিহত স্কুল শিক্ষিকা পলির খাতুনের মেয়ে কেয়া (৬) ও তাজুর শিশুকন্যা তিন্নি (৮) নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঈদের দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্রায় ২৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশু ঈদ উপলক্ষে নৌকা ভ্রমণের জন্য বৈরাগীরচর খেয়াঘাটে এসে স্থানীয় মাঝি আশরাফুল মহলদার ওরফে ছেন্টুর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠে। নৌকাটি নদীর মাঝখানে যাওয়ার পর প্রচণ্ড বাতাসের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় ১১ জনকে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা উদ্ধার করেএবং অপর ১২ নৌকা যাত্রী নিখোঁজ হয়।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমূল হক পাভেল জানান, লাশ দাফন ও আনুসাঙ্গিক খরচের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার করে প্রদান করা হয়েছে। দৌলতপুর থানার ওসি এনামূল হক জানান, ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ২৩ জন আরোহী ছিলো। এর মধ্যে ১১ জনকে তাৎক্ষণিক জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ ১২ জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে বুধবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ডুবে যাওয়া নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে মামলা করার পর নৌকার মাঝি আশরাফুল মহলদার ওরফে ছেন্টুকে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, ইউএনও শামীমূল হক পাভেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল আহমেদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিহতদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।