কথিত প্রেমিকার তথ্যে গোয়েন্দা জালে সোহেল

স্টাফ রিপোর্টার: ৩২ বছর বয়সী সোহেল বিবাহিত। জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের চিলাকাড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। তার স্ত্রীর নাম রাহেলা। কিন্তু স্ত্রী রাহেলার ব্যাপারে বিস্তারিত তেমন কোনো কিছু জানা যায়নি। তবে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানের সময় ব্যাংকের ওই শাখায় বিরাট অঙ্কের লেনদেনের বিষয়টি পরিচিত বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরই শুরু হয় আলোচিত এ ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা। সোহেল মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করায় এ কাজে তাকে সাহস যোগায় সে অভিজ্ঞতা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংক সংলগ্ন মিনা আক্তারের বাসাটি নানা কৌশলে ভাড়া নেয় সে। এরপর থেকে নানা জনের সাথে নানা ছলে শুরু হয় তার ওঠাবসা। নানা ছলছুতোয় ছুটে যেতো ব্যাংকে। এভাবেই প্রায় দু বছর আগে তার সাথে পরিচয় হয় ব্যাংকের নিয়মিত লেনদেনকারী স্বনির্ভর বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের ক্ষুদ্রঋণ কর্মী ইয়াসমিন সুলতানার সাথে। পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইলফোনে সোহেল প্রেমের ফাঁদে ফেলে জেলার হোসেনপুর এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণীকে। তার মাধ্যমেই পরিচয় হয় ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে। পিতা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এ পরিচয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহেল সখ্য গড়ে তোলে তাদের সাথে। এ কারণে সোহেলের সাথে ইয়াসমিন সুলতানার কথিত এ প্রেমসম্পর্কের বিষয়টি জানতেন ব্যাংকের এমএলএসএস আবুবকর। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুট হওয়ার সময় পর্যন্ত এ আবুবকরের সাথে সোহেলের নিবিড় যোগাযোগ ছিলো। অন্যদিকে প্রায় দেড় বছর আগে ব্যাংকের সামনে সোহেলের সাথে পরিচয় হয় সাবিনা আক্তার নামে এক কলেজছাত্রীর। কৌশলে সোহেল তার সাথেও প্রেমসম্পর্ক গড়ে তোলে।

ইয়াসমিন সুলতানা ও সাবিনা আক্তার- এ দুজনের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত ২১ জানুয়ারি সোহেল তাদেরকে বলেছিলো, ২৪ ও ২৫ তারিখ আমি একটি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকবো। এ দু দিন আমার মোবাইলফোন বন্ধ থাকবে, তোমাদের মোবাইলফোনও বন্ধ করে রেখো।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সোহেলের পরিচয় শনাক্ত ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে এ প্রেমের সম্পর্কটিই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় ক্লু হিসেবে বিবেচিত হয়। কথিত এ দু প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া যায় সোহেলের মোবাইল নম্বরসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেসব তথ্য ও মোবাইলফোনের সূত্র ধরেই সন্ধান মিলে সুড়ঙ্গ রহস্যের আলোচিত খলনায়ক সোহেলের।

এ এক আধুনিক সিঁদেল চোর। সুড়ঙ্গ তৈরি করতে করতে যে পৌঁছে যায় ব্যাংকের ভোল্ট পর্যন্ত। এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তি হবে কতোটা? এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবীদের অনেকেই বলেছেন, সিঁদেল চুরির সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *