ওয়াজ মাহফিলে প্রধান আকর্ষণের বক্তব্য : ছিলাম নারী হয়ে গেলাম পুরুষ

স্টাফ রিপোর্টার: ‘আগে ছিলাম রাজিয়া সুলতানা চৌধুরী, তখন ছিলাম নারী। একদিন কয়েকজন বুজুর্গ তুলে নিয়ে গেলো। আল্লাহর রহমতে হয়ে গেলাম পুরুষ। মুখভর্তি দাঁড়ি হলো। নামটা বদলে রাখা হলো আব্দুর রাজাক চৌধুরী। এখন আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী।’ গতরাতে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া মোহাম্মদীয়া বহুমুখি মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত ২০তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে মধ্যবয়সী একজন এ কথা বলার সাথে সাথে সচেতন মহলে বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলতে থাকেন শরিক সাধারণ মসুল্লি।

একটি ধর্মীয় সভায়, ধর্মীয় লেবাসে ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে এসব কী বলছেন? এ প্রশ্ন উঠতেই সচেতনদের মাঝে উত্তেজনা দানা বাঁধে। প্রধান আকর্ষণের সংক্ষিপ্ত জীবনীর পরপরই শরিক সাধারণ মসুল্লি প্রস্থান শুরু করেন। মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সভার ইতি টানা হয়। লেবাসধারীর ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের হেতু নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রকৃত পরিচয় জেনে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করা দরকার বলেও মন্তব্য করে সচেতন যুবসমাজ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়া মোহাম্মদীয়া বহুমুখি মাদরাসা প্রাঙ্গণে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরের আয়োজন করা হয়। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীকে। ব্যানারে লেখা হয় মহান আল্লাহর অলৌকিক নির্দশন তিন সন্তানের মা রাজিয়া সুলতানা চৌধুরী মহিলা থেকে পুরুষে রূপান্তর হয়ে পুনরায় দাম্পত্য জীবনে দু সন্তানের পিতা হয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রধান আকর্ষণ আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী। মাইকে এসব প্রচারও করা হয়। প্রচারণায় সরলসোজা নারী-পুরুষ ওই আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে ভিড় জমায়। ওই অলৌকিকভাবে বদলে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীর পরিচয় দেয়ার ধরন শুনেও তার সত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি বলেন, জন্ম কুষ্টিয়া দৌলতপুরের চিলমারির চরে। বয়স যখন ৬ বছর তখন মা মারা যায়। পিতা দ্বিতীয় বিয়ে করে। আমরা কয়েক ভাই বোন দর্শনা হল্ট স্টেশন এলালাকার খালু রিয়াজুল মাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বড় হতে থাকি। একপর্যায়ে চলে যাই ঢাকায়। ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করি। স্কুলে ভর্তি হই। প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষক শফি মাস্টারের সাথে বিয়ে হয়। সংসার শুরু করি। শাশুড়ি মারধর করতে থাকে। সংসারে আসে দু ছেলে এক মেয়ে। ১৯৭৯ সালের ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরের সামনে বসেছিলাম। কয়েকজন বুজুর্গ এসে আমাকে নিয়ে গেলো। এরপর কী হয়েছে জানি না। পরক্ষণেই দেখি আমি পুরুষ হয়ে গেছি। এসব ওই সময় সাংবাদিকেরা লেখালেখিও করেন। পরে পুরুষ হিসেবে বিয়ে করি। বর্তমান সংসারে দু ছেলে রয়েছে।’

ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় লেবাসে মহান আল্লাহ তায়ালার দোহাই দিয়ে যেসব তথ্য তুলে ধরে আব্দুর রাজ্জাক তা যে মনগড়া তা অনেকের কাছে স্পষ্ট হলেও গতরাতে অবশ্য তার বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন যুবসমাজ। সচেতন যুবসমাজ বলেছে, ধর্মের নামে ধর্মীয় পোশাকে যেসব তথ্য বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তার পরীক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।