ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রিসভার ৪৯ সদস্যের শপথ

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভাও শপথ গ্রহণ করে। প্রথমে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং ২ জন উপমন্ত্রী শপথ নেন। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নবগঠিত মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি (জেপি), ওয়ার্কার্সপার্টি ও জাসদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এরমধ্যে জাপার ৩ জন ও অন্য তিনটি দলের ১ জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন তরুণ সংসদ সদস্য এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন। তিনি অনুষ্ঠানস্থলের সামনের সারির নির্ধারিত আসনে বসেন। এর পরপরই আসেন রাষ্ট্রপতি। পরে মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। এরপর মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানান, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ৩ দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। এ ঘোষণার সাথে সাথে কানায় কানায় পূর্ণ দরবার হলে উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। মাত্র ৩০ মিনিটেই শেষ হয় শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাষ্ট্রপতি অতিথিদের চা-চক্রে আপ্যায়িত করেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন ও ঐকমত্যের সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এর আগে তিনি দুবার (১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৩) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেন গতকাল রোববার। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রোববার বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে শপথ পড়িয়েছেন। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি শপথ পড়ান মন্ত্রিসভার সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভায় সদস্য ৪৮ জন। এর মধ্যে ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, বিরোধী দলের উপনেতা রওশন এরশাদ, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের নেতা, প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতের বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠান শুরুর পাঁচ মিনিট আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করলে করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর ৩টা ২৯ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দরবার হলে প্রবেশ করেন। সাড়ে ৩টায় আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুইঞা প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে শপথ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দু উপমন্ত্রী শপথ নেন। অতিথিদের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানস্থল দরবার হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে বঙ্গভবনের খোলা মাঠে অতিথিদের আপ্যায়িত করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো মাঠ ঘুরে অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ও তার পুত্র রেজওয়ান সিদ্দিক ববি ও পুত্রবধূ পেপ্পি সিদ্দিককে সাথে নিয়ে ঘুরে ঘুরে অতিথিদের খোঁজখবর নেন।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ নিয়েছেন: মন্ত্রী- আবুল মাল আবদুল মুহিত (অর্থ), আমির হোসেন আমু (শিল্প), তোফায়েল আহমেদ (বাণিজ্য), মতিয়া চৌধুরী (কৃষি), আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ), মোহাম্মদ নাসিম (স্বাস্থ্য), সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার), খন্দকার মোশাররফ হোসেন (প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), রাশেদ খান মেনন (বেসামরিক বিমান ও পর্যটন), অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (ধর্ম), ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (গৃহায়ন ও গণপূর্ত), আ.ক.ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধ), সায়েদুল হক (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), এমাজ উদ্দিন প্রামাণিক (পাট ও বস্ত্র), ওবায়দুল কাদের (যোগাযোগ), হাসানুল হক ইনু (তথ্য), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (পানিসম্পদ), আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (পরিবেশ ও বন), নুরুল ইসলাম নাহিদ (শিক্ষা), শাজাহান খান (নৌ-পরিবহন), আনিসুল হক (আইন, বিচার ও সংসদ), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ) মুজিবুল হক (রেল), আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (পরিকল্পনা), মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), আসাদুজ্জামান নূর (সংস্কৃতি), সৈয়দ মহসিন আলী (সমাজকল্যাণ), শামসুর রহমান শরীফ ডিলু (ভূমি) ও অ্যাড. কামরুল ইসলাম (খাদ্য)।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন শাহরিয়ার আলম। অন্য প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- মুজিবুল হক চুন্নু (শ্রম ও কর্মসংস্থান), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), এমএ মান্নান (অর্থ), মির্জা আজম (বস্ত্র ও পাট), প্রমোদ মানকিন (সমাজকল্যাণ), বীর বাহাদুর উ শৈ সিং (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক) নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), বীরেন শিকদার (যুব ও ক্রীড়া), আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (ভূমি), ইসমত আরা সাদেক (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), মেহের আফরোজ চুমকি (মহিলা ও শিশু), মশিউর রহমান রাঙ্গা (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়), জাহিদ মালেক (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ), নসরুল হামিদ বিপু (বিদ্যুৎ) এবং জুনাইদ আহমেদ পলক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)। দু উপমন্ত্রী হলেন- আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (পানিসম্পদ) এবং আরিফ খান জয় (যুব ও ক্রীড়া)।

 

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফর যৌথ টহল

স্টাফ রিপোর্টার: সীমান্তে মানুষ হত্যা, শিশু-নারী পাচার ও মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ টহল পরিচালা করেছে।

চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা সীমান্তের ৬১ মেন পিলার থেকে চুয়াডাঙ্গা ভারত সীমান্তের ৬২ নং মেন পিলার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার যৌথ টহল দিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বেনীপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার নাসির উদ্দীন ও বিএসএফ’র পক্ষে ভারতের নদীয়া জেলার কেষ্টগঞ্জ থানার ১৭৩ ব্যাটালিয়নের নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর অজিত কুমার।