এক বছর পেরিয়ে গেলেও দশমীর অপহৃত ইটভাটা মালিকের ছেলে সোহেল রানার সন্ধান মেলেনি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দশমী গ্রামের একতা ইটভাটার মালিক আব্দুল বারীর ছেলে অপহৃত সোহেল রানার (২৪) সন্ধান এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান মেলেনি। একমাত্র ছেলেটি বেঁচে আছে, না মরে গেছে দীঘদিনেও তা জানতে পারেননি তার বৃদ্ধ বাবা মো. আব্দুল বারী ও মা আহিনুর বেগম। শিশুপুত্র সন্তান নিশানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি স্ত্রী সুলতানা খাতুন।

গত বছরের ১০ জানুয়ারি সোহেল রানাকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বদরগঞ্জ বাজার থেকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করেই সোহেল রানাকে মুক্ত করতে পরিবারের পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ নিলেও তা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি।

সোহেল রানার ফুফাতো ভাই মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও সোহেল রানার সন্ধান মেলাতে পারেনি।

গত শুক্রবার দুপুরে দশমী গ্রামের বাড়িতে বসে সোহেল রানার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সাথে কথা হয়। মা আহিনুর বেগম ছেলে কোথায় ঘুমাতো, কোথায় বসতো, কোথায় কম্পিউটার চালাতো, কোথায় শিশু সন্তানকে নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতো, তা ঘুরে ঘুরে দেখান। আহিনুর বলেন, ২০ লাখ কেন আরো বেশি কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি ছেলেকে ফেরত পেতে চাই।

নিজ মহল্লাতেই বাবা-মার পছন্দে সুলতানা খাতুনকে বিয়ে করেন সোহেল রানা। স্বামীর অপহরণের পর বেশির ভাগ সময়ই স্ত্রী সুলতানা পিতার বাড়িতে থাকেন। বর্তমানে তিনি বদরগঞ্জ বাকিবিল্লাহ মাদরাসায় কামিল শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। সুলতানা বলেন, ছেলের বয়স যেদিন একমাস ৮ দিন। সেদিনই তার পিতাকে অপহরণ করা হয়। ছেলে এখন প্রায়ই বাবা বলে ডাকে আর এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। অথচ সেই বাবাই এখন নেই। ছেলেটি আদৌ কোনোদিন পিতার আদর পাবে কি-না তা সৃষ্টিকর্তা জানেন।

অপহৃতর বাবা আব্দুল বারী জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার ভাই আব্দুল হালিম এবং ইউপি মেম্বার খোশদেল, ভুলটিয়ার সিদ্দিক ও বোয়ালিয়ার অহিদসহ কয়েকজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কয়েক দফায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। যাদের বিষয়ে বিস্তারিত পুলিশকে জানানো হয়েছে। ছেলের সন্ধানে ভারতের নদীয়া জেলার কেস্টগঞ্জের বরইপাড়াতেও লোক পাঠানো হয়। থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের নামে জেলা ও জেলার বাইরে অভিযান চালায়। ছেলের খোঁজে বিভিন্ন সময়ে গাড়িভাড়া বাবদ আরো এক লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হয়। এতো কিছুর পরও ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

আব্দুল বারী বলেন, ছেলেকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সপ্তাখানেক আগে চেয়ারম্যান নজরুলসহ বেশিরভাগ লোকই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যানের ভাই হালিমের কাছে এক লাখ ২০ হাজার ও অহিদের কাছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা এখনও পাওনা রয়েছে। ছেলে উদ্ধারে পুলিশও কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই খালিদ হাসান জানান, সোহেল রানা অপহরণ মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তবে মুল সন্দেহভাজন ভুলটিয়ার সিদ্দিক আত্মগোপনে চলে গেছে। তাকে ধরতে পারলেই রহস্য উন্মোচিত হবে। তাছাড়া সোহেলরানার ব্যবহৃত মোবাইলের সিম উদ্ধার করে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেটটি কোথায় ব্যবহার হচ্ছে, তা চেষ্টা করেও জানা সম্ভব হয়নি। এটা জানলেই মামলার অনেক অগ্রগতি হবে।