একাদশে এবার ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির সম্ভাবনা : টাকা লুট বন্ধে কলেজে ভর্তি একবার

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষার্থীর টাকা লুটপাট বন্ধে একাদশ শ্রেণিতে এবার ভর্তি একবারই। অন্যান্য বছর ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করত কলেজ কর্তৃপক্ষ। এবার শিক্ষার্থী নিজেই তার ভর্তির বিষয় নিশ্চিত করবে। আগামী ৪ মে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। এর ৫ দিন পর ৯ মে থেকে তারা একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করবে। ৩১ মে পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। ৬ জুন তাদের আবেদনের ফল প্রকাশ করবে সরকার। ২০ জুন থেকে ভর্তি শুরু হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে এক বৈঠকে ২০১৭ সালের এই ভর্তি নীতিমালা অনুমোদন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর এই স্তরে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, এবারের পুরো ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনেই সম্পন্ন হবে। কোনো শিক্ষার্থী সর্বনিন্ম ৫টি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে মোট আবেদন (৫ থেকে ১০ কলেজ) ফি ১৫০ টাকা। এসএমএসের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রতি কলেজে আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে অনলাইন এবং এসএমএস মিলিয়ে কোনোভাবেই ১০টির বেশি কলেজে ভর্তির আবেদন করা যাবে না। www.xiclassadmission.gov.bd শীর্ষক অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এবারের ভর্তি কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ১ জুলাই একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে ভর্তির রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আবেদন করার পর প্রথম মেধা তালিকা ৬ জুন প্রকাশ করা হবে।

দ্বিতীয় মেধা তালিকা ১৩ জুন এবং তৃতীয় তালিকা ১৮ জুন প্রকাশ হবে। গত বছর তালিকা প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের কলেজে গিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয়েছে। এ জন্য কলেজে ভর্তির টাকা জমা দিতে হয়েছে। কিন্তু পরের তালিকায় পছন্দের কলেজ পেলে আগে ভর্তি হওয়া কলেজ থেকে আর টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। এজন্য চলতি বছর কাছাকাছি সময়ে তিন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর শুরু হবে ভর্তি। ১৮ জুন তৃতীয় তালিকা প্রকাশের পর ২০ জুন ভর্তি শুরু হবে। দুই দফায় ২৯ জুন পর্যন্ত চলবে। এর আগে প্রতিটি তালিকা প্রকাশের পর পছন্দের কলেজ পেলে সেখানে ১৮৫ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক নয়। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে নিশ্চিত না করলেও চলবে। তবে কেউ চাইলে প্রথম বা দ্বিতীয় তালিকায় ঠাঁই পাওয়া কলেজে নিশ্চিত করে পরবর্তী তালিকায় আরও পছন্দের কলেজ পেতে আবেদন করতে পারবে। প্রতিবার একটির বেশি কলেজের নাম প্রকাশ করা হবে না।

অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, শিক্ষার্থী কোন কলেজে চান্স পেয়েছে তা শুধু সেই জানবে। ভর্তি হওয়ার আগে তা কোনো কলেজ জানবে না। তিন তালিকা প্রকাশের পর নিশ্চিত করার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে একটি পিন কোড দেয়া হবে। সেটি নিয়ে সে ভর্তি হতে যাবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একবার ভর্তির এই বিধান চালুর ফলে শিক্ষার্থীদের লাখ লাখ টাকা রক্ষা ও ভোগান্তি দূর হবে। কলেজে ভর্তিতে এবারও তিন ক্যাটাগরি করা হয়েছে। সেশন চার্জসহ মফস্বলের কলেজে ভর্তি ফি ১ হাজার, জেলা সদরে ২ হাজার, ঢাকা বাদে বাকি মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার, আধা এমপিও বা নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নেয়া যাবে। উন্নয়ন ফি ৩ হাজারের বেশি নয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়া যাবে না। সবধরনের ফি রসিদের মাধ্যমে নিতে হবে। কলেজগুলো ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত নির্ধারণ করতে পারবে। তবে কোনো কলেজ মন্ত্রণালয় বা বোর্ড নির্ধারিত তারিখের বাইরে ইচ্ছামতো ভর্তি করতে পারবে না। আসন সংখ্যাসহ ভর্তির সব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। কলেজে বোর্ড থেকে দেয়া ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর তালিকাও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ভর্তিতে মূল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসাপত্র অবশ্যই লাগবে। ভর্তিতে এবারও কোটা পদ্ধতি থাকছে। ৮৯ শতাংশ মেধায় ভর্তি হবে।

বাকি ১১ শতাংশের মধ্যে ৫ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা, ৩ ভাগ আসনে সংশ্লিষ্ট কলেজের বিভাগীয় এবং জেলা সদরের বাইরের শিক্ষার্থী, ২ শতাংশ আসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দশমিক ৫ শতাংশ আসনে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক-কর্মচারী এবং দশমিক ৫ শতাংশ আসনে বিকেএসপি ও প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সনদের সমমান নিশ্চিত করে ভর্তি হতে পারবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও ভর্তি উন্মুক্ত।