‘উপজেলা নির্বাচনের পর আন্দোলন, নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সরকারের গা-জ্বালা’

১৯ দলীয় জোট আয়োজিত রাজবাড়ীর জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া বললেন

স্টাফ রিপোর্টার: ১৯ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দ্রুত সরকারকে বিদায় করা হবে। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সরকারের গাজ্বালা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজবাড়ীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশি রেলওয়ে ময়দানে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথম ঢাকার বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,  জনগণ জানিয়ে দিয়েছে ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। জনগণ ভোট দিতে যায়নি। একই সাথে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। একদলীয় শাসন কায়েম করে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। জনগণ না চাইলে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বন্দুক দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রক্ত পিপাসু একটি দল। এরা মানুষ খুন করতে পারে। মানুষ গুম করতে পারে। উন্নয়ন করতে পারে না। সরকার একটি রক্ত পিপাসু সরকার। তারা মানুষের জীবন নিতে পারে, মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে না। দেশকে বাঁচাতে হলে নিজেরা রক্ষা পেতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। না হলে দেশকে সার্বভৌম রাখা যাবে না। দেশকে সার্বভৌম রাখতে হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছিলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার মানুষের সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ক্ষমতায় থাকলে হত্যা নির্যাতন বন্ধ হবে না।

তিন মাসের আন্দোলনে নিহত ৩০৪, গুম ৬৫: খালেদা জিয়া বলেন, ২৫ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের আন্দোলনে ১৯ দলের ৩০৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, গুম হয়েছেন ৬৫ জন। তাই এ সরকারের হাতে শুধু রক্ত আর রক্ত।

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সরকারের গা-জ্বালা: ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব না। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন স্থানীয়। এ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। এ জন্য আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আর তাতেই সরকারের গাজ্বালা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কীভাবে ভোটডাকাতি ও কেন্দ্র দখল করেছে। তারা যদি এ ধরনের জালিয়াতি না করতো তাহলে অল্প কয়টা উপজেলায় জিততো। গোপালগঞ্জেও বিএনপি দুটি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে, সরকারের পায়ের তলা থেকে আস্তে আস্তে মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হলেও সরকার তাদের ক্ষমতা দেয়নি। তাদেরকে জনগণের কাজ করার অধিকার দেয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশে কোন জঙ্গির ঠাঁই হবে না: খালেদা জিয়া বলেন, খুন-গুমের পর বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সরকার এখন শুধু জঙ্গি জঙ্গি বলছে। অথচ পুলিশের হাত থেকে জঙ্গিরা যে পালিয়ে গেলো তার দায় বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। তিনি বলেন, এসব বলে কোনো লাভ হবে না। কারণ বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গি বা আল-কায়েদার ঠাঁই হবে না। কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

রাজবাড়ীবাসীকে দু প্রতিশ্রুতি: রাজবাড়ীবাসীকে দুটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ৫ বছরেও পদ্মা সেতু করতে পারেনি। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম পদ্মা সেতু ও রাজবাড়ীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন। ইনশাআল্লা  আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে পদ্মা সেতু হবে এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবো। রাজবাড়ীবাসীকে আন্দোলনে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এখন দল গুছাচ্ছি। অনেকদিন ধরে দল গোছাতে পারিনি। দল গুছিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পরই আন্দোলনের ডাক দেব। আপনারা ওই আন্দোলনে সাড়া দেবেন। ইনশাআল্লাহ, আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। বাংলাদেশ রক্ষা পাবে।

এর আগে গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সকাল সোয়া ১১টায় রওনা হয়ে বেলা সোয়া ১টায় মানিকগঞ্জের ঘিওর পৌঁছে। সেখানে দলের প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মাজার জিয়ারত করেন ১৯ দলীয় জোট নেত্রী। পথে আমিনবাজার, সাভার ও মানিকগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। বেলা আড়াইটায় রাজবাড়ী সার্কিট হাউজে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ সেরে কিছু সময় বিশ্রাম নেন তিনি। বিকেল সোয়া ৪টায় রাজবাড়ীর শহীদ আব্দুল আজিজ খুশি ময়দানের জনসভামঞ্চে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ, এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদসহ ১৯ দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনসভা বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।