উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার: দারিদ্র্য হ্রাস ও উন্নয়ন অগ্রগতির নতুন মাইলফলক অর্জন করলো বাংলাদেশ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব হলো। আর্থ-সামাজিক খাতের অর্জনগুলো অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ঝুঁকি কমিয়েছে।

পাশাপাশি মানব উন্নয়ন, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ আর্থিক খাতে উন্নয়ন ঘটেছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করেছে। ফলে, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। যা মধ্য আয়ের দেশের পথে এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কমিটি (সিডিপি) গত শুক্রবার বাংলাদেশের এ যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে। যদিও চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষণকালীন সময়ে বাংলাদেশকে এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটির যেকোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ এ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের মানদণ্ড অনুযায়ী মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। প্রতি তিন বছর অন্তর সিডিপি এলডিসি দেশগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে দ্বিতীয়বার পর্যালোচনায় যোগ্য হলে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করবে ওই কমিটি। এর তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাবে বাংলাদেশ।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি বেশ সন্তোষজনক এবং এটি কোনো ধরনের হোঁচট না খেলে অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার কারণ নেই। তার মতে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাংলাদেশ এই অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছুলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ফোরামে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। আন্তর্জাতিকভাবে ঋণ প্রাপ্তি কিংবা বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। কারণ, উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে বাণিজ্যে যে অগ্রাধিকার পায় তার সবটুকু পাবে না। আবার বৈদেশিক অনুদান, কম সুদের ঋণও কমে আসবে। বাংলাদেশকে তার সক্ষমতা দিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তারা একই সাথে কিছু বিষয়ে সরকারের মনোযোগও আকর্ষণ করেছেন।

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, এই উত্তরণের প্রথম ধাক্কা আসবে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপিতে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি সময় পর বাংলাদেশ এ সুবিধা হারাবে। এরপর জিএসপি প্লাসের আওতায় রফতানিতে শুল্ক সুবিধা পেতে হলে মেধাস্বত্ব আইনের বাস্তবায়ন, শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার, পরিবেশগত ইস্যু এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রোধসহ বেশকিছু বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে। ফলে এখনই এসব বিষয়ে নজর দেয়া এবং সমন্বয়ের সাথে কাজ করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, দেশ এগিয়ে যেতে হলে দক্ষতা অর্জন ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু বিনিয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। এটি জিডিপি’র ২৩ শতাংশে আটকে আছে। এক শতাংশ বাড়াতে হলে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা কোথা থেকে আসবে? বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনলে সরকারের রাজস্ব কিছু কমলেও তা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদের কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেন সিপিডি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস।

উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ সিপিডি জাতিসংঘ সদর দফতরে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন সংক্রান্ত ঘোষণা প্রদান করে। সে অনুযায়ী এই চিঠি হস্তান্তর করা হলো।