উচ্চ স্বরে সরস্বতীপূজোর গান আর মাইকে ওয়াজ মাহফিল : এসএসসি পরীক্ষার পূর্বরাতে চুয়াডাঙ্গায় চরম শব্দদূষণ

 

পরীক্ষার কথা শুনে ওয়াজ মাহফিলের প্রধান বক্তার ভুল স্বীকার : সরস্বতী পূজামণ্ডপগুলোতে বাজানো গানের স্বর কমিয়ে আয়োজকরা বললেন বিষয়টি বুঝিনি বলেই বড় ভুল হয়ে গেছে আমাদের

স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসি পরীক্ষার পূর্বরাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বসবাস করা পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয় ভয়াবহ শব্দদূশণে। একদিকে ওয়াজ মাহফিল অপরদিকে সরস্বতীপূজার প্যান্ডেলে বাজানো গানে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই এ অভিযোগ তুলে বলেন, প্রশাসন থাকলে কি এসএসসি পরীক্ষার পূর্বরাতে এরকম শব্দদূষণের শিকার হতে হয়?

শব্দদূষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বড়বাজারপাড়ায় পাশাপাশি সরস্বতীপূজার প্যান্ডেলে গিয়ে বিষয়টি জানতে গেলে তারা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে এমনটি হয়েছে। এখন আর উচ্চ স্বরে গান বাজানো হবে না। ফলে রাত সাড়ে ১১টার পর থেকেই গানের উচ্চস্বর থামিয়ে দিয়ে পূজোর অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে মেতে ওঠেন আয়োজকসহ সংশ্লিষ্টরা।  অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার অদূরবতী তালতলা পশুহাটপাড়া যুবসমাজ ব্যানারে আয়োজিত ইসলামী ওয়াজ মাহফিল সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়। বেশ কয়েকটি মাইক উঁচুতে বেঁধে উচ্চস্বরে ওয়াজ শুরু হলে পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয় বেকায়দায়। অভিভাবকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও ধর্মীয় সভার কারণে তারা সরাসরি বারণ করতে না পেরে দৈনিক মাথাভাঙ্গা দফতরে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পূর্বরাত বলেই শুধু নয়, এরকম শব্দ দূষণ কি সৌদি আরবে করা হয়? সেখানে মসজিদে আজানের সময়ও ৩৫ ডেসিবলের বেশি সাউন্ড দেয়া হয় না। অথচ আমাদের দেশে যতোটা দেয়া যায় অতোটাই দেয়া হচ্ছে। অন্যের বিষয়টি না ভেবেই উচ্চস্বরে ওয়াজের আয়োজন করা হয়। এসএসসি পরীক্ষার পূর্বরাতে যেভাবে ওয়াজ চলছে তা দেখার দায়িত্ব কার? এসএসসি পরীক্ষার পূর্বরাতে প্রশাসনই বা ওই ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন দিলো কীভাবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে গতরাত পৌনে ১২টার দিকে ওয়াজ মাহফিলের নিকট পৌঁছে আয়োজকদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদের পক্ষে বিল্লাল হোসেন বলেন, এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টি আমরা জানি না। তাছাড়া পৌরসভা থেকে তো অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন কি পৌরসভা দেয়? এ প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করছি।

সরস্বতীপূজার আয়োজন শুরু হয়ে গতকাল সকাল থেকেই। চলবে শনিবার পর্যন্ত। গতকাল ডেকসেটের বাজনা এলাকায় বিরক্তির কারণ হলেও দূরে তেমন পৌঁয়নি। তবে সন্ধ্যা হওয়ার পর শব্দদূষণে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের বিষিয়ে তোলে। বিষয়টি জানার পর আয়োজকদের দ্রুত শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যেমন ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে, তেমনই ওয়াজ মাহফিল আয়োজকদের পক্ষে সরল স্বীকারোক্তির সাথে সাথে দ্রুত মাহফিল শেষ করার পদক্ষেপকেও ইতিবাচক বলে মন্তব্য সচেতনমহলের। ওয়াজ মাহফিলের অয়োজকদের তরফেই শুধু নয়, ওয়াজ মাহফিলের প্রধান বক্তা হযরত মাওলনা মুফতি আব্দুল হান্নান বলেন, সত্যিই ভুল হয়ে গেছে। পরীক্ষার বিষয়টি না জেনে আমি আগাম ওয়াজের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে কথা দেয়া এবং ওয়াজ করা ঠিক হয়নি। কথা দিচ্ছি। পরীক্ষা চলাকালে কোনো স্থানেই আর উচ্চস্বরে মাইকে ওয়াজ করবো না।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার পূর্বরাতের প্রস্তুতির বিষয়টি না জেনেই ওয়াজ মাহফিল ও সরস্বতী পূজা উদযানকারীদের না হয় ভুল হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি যাদের দেখার দায়িত তারা কি তা দেখেছেন? সচেতনমহলের অনেকে এ প্রশ্ন করলেও গতরাতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে যখন দৈনিক মাথাভাঙ্গার দুজন প্রতিবেদক সরেজমিনে বিষয়টি জানতে যান, তখন সেখানে পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে তেমন কাউকেই দেখা যায়নি।