ইসির পরিকল্পনায় নির্বাচন : তফসিল ঘোষণা হলেই বিএনপির লাগাতার কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বহুবিধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করার পর এবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়াও সাংবিধানিক প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়া, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ ও ২৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। অপরদিকে তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপি লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। নির্বাচন পড়বে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। ওই সময় তৃতীয় শক্তিই কী নেবে দায়িত্ব? ঘুরে ফিরেই উঠে আসছে এ প্রশ্ন।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলেও ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য ৫ অথবা ৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরও যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়, সেক্ষেত্রে ভোটগ্রহণের দিন পরিবর্তন করা হবে। সমঝোতার আলোকে ২৪ জানুয়ারির আগে যেকোনো দিন ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হতে পারে।

কমিশনসূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে সংবিধানের ১২৩ এর ৩(খ) অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারির পরও নির্বাচন করা যেতে পারে। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ এখনো ভেঙে না যাওয়ায় সংবিধানের এ বিধান কার্যকর করা যেতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। কমিশনের একটি সূত্র জানায়, আগামী ২৪ জানুয়ারির আগে কমপক্ষে ৫৫ দিন সময় রেখে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে। যাতে এর মধ্যে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশসহ নির্বাচনের সব কার্যক্রম শেষ করা যায়। ওই রোডম্যাপেই ৫ অথবা ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা আছে। এক্ষেত্রে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সময় রাখা হয়েছে ৪৫ দিন। সহিংসতার আশঙ্কায় হাতে সময় রাখতে চায় ইসি। এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটগ্রহণের পরও যথেষ্ট সময় রাখতে চায় ইসি। কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ না নিলে বেশকিছু আসনে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এসব আসনে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। পরে সেখানে যাতে পুনর্নির্বাচনের সময় থাকে সে বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার সম্ভাবনা বেশি।

এ প্রসঙ্গে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছু আসনে ভোটগ্রহণ বন্ধও রাখতে হতে পারে। সেসব আসনে যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরবর্তী ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা যায় তা বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন্য যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসি সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণের অন্তত ৪৫ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। কোনো আসন বা কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার ফলে পুনরায় ভোটগ্রহণ এবং নির্বাচনী ফলাফল সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ ইত্যাদি কারণে কমপক্ষে ১০ দিন সময় হাতে রাখতে চায় ইসি। এ হিসাবে ২৪ জানুয়ারির কমপক্ষে ৫৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এজন্য নভেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সমঝোতাকেই গুরুত্ব দেবে ইসি
তবে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার পর নির্বাচন করতে বেশি আগ্রহী নির্বাচন কমিশন। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে সমঝোতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হলে ২৪ জানুয়ারির পরও নির্বাচন হতে পারে। দুই জোটের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, কমিশন এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। এ কারণে তফসিল ঘোষণা নিয়ে কমিশন একটু সময় নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কমিশনার বলেন, এর আগে সংসদ নির্বাচন নিয়ে কয়েকবার তফসিল ঘোষণার নজির আছে। তবে বর্তমান কমিশন একবার তফসিল ঘোষণার মাধ্যমেই সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে আগ্রহী। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণা করা হয় ভোটগ্রহণের ৪৬ দিন আগে। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর ঘোষিত ওই তফসিলে ১৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা এ তফসিল অনুসারে মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় এবং সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় ২৩ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০০৬ সালে বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন বিতর্কিত কমিশন চারবার তফসিল পরিবর্তন করেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়।