ইসির ওয়েবসাইট : প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য গায়েব

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্য গায়েব হয়ে গেছে। তবে কমিশন থেকে দাবি করা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়তো এমনটি হতে পারে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাত করেই প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত হলফনামা ইসির ওয়েবসাইটে শতচেষ্টা করেও বের করা যাচ্ছে না। হলফনামা দেখতে কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের গতি কম থাকলে এমনটা হতে পারে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থীদের ৮টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা দেয়া বাধ্যতামূলক করে কমিশন। সেই সময়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে এবং প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে সকল প্রার্থীর তথ্য ভোটারদের সামনে প্রচারও করা হয়। এবার কমিশন প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুধুমাত্র ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আপত্তি না দিলেও এবার ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনে কঠোরভাবে আপত্তি জানায়। আওয়ামী লীগের আপত্তি দেয়ার একদিনের মাথায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে তা গায়েব হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সোমবার রাত থেকে http://www.ecs.gov.bd/Bangla/ এর প্রার্থীদের প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্যাদি সংবলিত ট্যাবটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ওয়েবসাইটে ঢোকা গেলেও হলফনামার পৃষ্ঠায় প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কমিশনে বারবার অভিযোগ করা হলেও তারা আমলে নিচ্ছে না। কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশনের দোতলার কিছু কক্ষে ওয়েবসাইটে হলফনামার তথ্য পাওয়া গেলেও নিচতলাসহ অন্যান্য কক্ষের কম্পিউটারে রহস্যজনকভাবে তা দেখা যাচ্ছে না। হয়তো সরকার বিটিসিএলের মাধ্যমে পাতাটিতে প্রবেশে কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতেই ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী-এমপির সম্পদের হিসাব তুলে ধরে গণমাধ্যম। প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন প্রার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার সিইসির সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন সমন্বয় উপকমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে হলফনামার তথ্য প্রকাশ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, প্রার্থীদের হলফনামা সম্পর্কিত তথ্য কমিশন থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে হলফনামা সংক্রান্ত তথ্য প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়। গত সোমবার বৈঠকে বসে কমিশন হলফনামা প্রকাশের আইন-কানুন নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তবে গতকাল কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হলফনামা প্রচার বন্ধের জন্য কোনো ফাঁকফোকর খোঁজা হচ্ছে না। গণমাধ্যমের খবর সঠিক নয়। এটা প্রচারে কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটা প্রাথমিকভাবে রিটার্নিং অফিসার প্রচার করে থাকেন। পরে কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়।
এদিকে, কমিশন হলফনামা প্রকাশ করা নিয়ে পুনর্বিবেচনার চিন্তা-ভাবনা করলেও আদালতের রায় ও আইনেই তা প্রকাশের সুযোগ আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে হলফনামা ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রচারের বিষয়ে বলা আছে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২ (৩বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামার মাধ্যমে ৮টি তথ্য ও কোনো কোনো তথ্যের স্বপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলী ভোটারদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। হলফনামা প্রচারের সুবিধার্থে প্রার্থীগণের নিকট থেকে হলফনামার মূল কপি ছাড়াও আরো দুটি ফটোকপি নিতে হবে।