ইম্প্যাক্টে অপারেশন : ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনেরই তুলে ফেলতে হয়েছে চোখ

সিভিল সার্জনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : চোখে অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসকের সকল সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্টে অপারেশনের পর তীব্র যন্ত্রণায় কাতর ২০ নারী পুরুষের মধ্যে ১৯ জনের চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। অপরজন হায়তানও চোখে কিছু দেখতে পারছেন না। তার অপারেশন করা চোখটাও শেষ পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হতে পারে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. খায়েরুল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকেলে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার সেন্টারের অপারেশন থিয়েটারসহ ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। তিনি তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তথা ২ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন পেশের জন্য বলেছেন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রশাসনের তরফে গঠিত তদন্ত দলের পক্ষে ইতোমধ্যেই ইম্প্যাক্টের অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতির নমুনাসহ অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত ওষুধ ও পথ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন গতকালই ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের আই (চক্ষু) কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ শাহীনের সকল শিক্ষাসনদের ফটোকপি সংগ্রহ করেছেন। তার এমবিবিএসসহ অন্যান্য সনদ যাচাইয়েরও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার গত কয়েকদিন ধরে বন্ধ রাখা হলেও গঠিত তদন্ত টিমের নিকট থেকে অপারেশন থিয়েটারের কোনো ত্রুটি নেই মর্মে মন্তব্য নিয়ে তা দ্রুত চালু করার তোড়জোড় চলছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হলেও অপর চোখ নিয়েও শঙ্কিত ক্ষতিগ্রস্তরা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে গত ৫ মার্চ ২৪ জন চক্ষু রোগীর একটি করে চোখের অপারেশন করা হয়। পরদিন ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে ২০ জনের চোখে যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। এরা পরবর্তীতে একই চিকিৎসা কেন্দ্রে ফিরে তাদের চোখে যন্ত্রণার কথা জানালে বাইরের চোখের ডাক্তারের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ২০ জনের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মোহাম্মদপুরের দৃষ্টি চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে গত ২০ থেকে ২২ মার্চের মধ্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ইনফেকশনের চোখগুলো তুলে ফেলতে হয়েছে। ঢাকার ইসলাামি হাসপাতালে ভর্তি ৯ জনের চোখে অপারেশন করে তুলে ফেলতে হয়েছে। হারদীর হায়াতনের চোখ তুলে ফেলা না হলেও তার ইম্প্যাক্টে অপারেশন করা চোখটিতে দেখতে পারছেন না। যন্ত্রণাও যায়নি। তার মেয়ে ফরিদা খাতুন বলেছেন, আমরা হতদরিদ্র। মায়ের চোখে অপারেশন করে আমরা যে হয়রানীর শিকার হচ্ছি তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে ইম্প্যাক্টের তরফে বলা হয়েছে, খরচ দেয়া হবে। কিছু খরচ দেয়াও হয়েছে। অপরদিকে সদাবরির হানিফা বেগমের মেয়ে হালিমা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ৫ মার্চ ইম্প্যাক্টে মায়ের চোখে অপারেশন করানো হয়। পরদিন ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফেরার পর যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। ৯ মার্চ আবারও ইম্প্যাক্টে নিয়ে আসা হলে সেখান থেকে বলা হয় ডা. ফকির মোহাম্মদের নিকট দেখাতে। সেখানে দেখানোর পর পরামর্শ দেয় ঢাকার ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি হতে। সেখানে ১৩ মার্চ একটি অপারেশন করা হয়। যন্ত্রণা কমলেও পরবর্তীতে আরও একটি অপারেশনের কথা জানায়। সেমতে গত ২৪ মার্চ অপারেশন করা হয়। গত পরশু ২৭ মার্চ ঢাকার হাসপাতাল ছেড়েছি।
চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ স্টেন্টারে অপারেশনের পর ২০ জনের চোখে ইনফেকশনে শেষ পর্যন্ত চোখ তুলে ফেলার ঘটনাটি প্রথমদিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ঘনটনাটির তেমন গুরুত্ব না দিলেও গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় বিস্তারিত প্রকাশের পর গঠন করেছেন তদন্ত কমিটি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র চক্ষু কনসালটেন্ট ডা. শফিউজ্জামান সুমনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ইম্প্যাক্টে চুয়াডাঙ্গার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা. শফিউল কবির জিপুর সাথে কথাও বলেছেন। তিনি অবশ্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে চোখের অপারেশন করিয়ে চোখ হারানো পরিবারগুলোর অধিকাংশের তরফেই ঘটনার সুষ্ঠুতদন্ত পূর্বক প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি উপযুক্ত ক্ষতিপুরণেরও দাবি জানানো হয়েছে।