ইবি ভিসি অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে তালা দিলো চাকরিলীগ

ইবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার জন্য আবারো  বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির চাকরিপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার চাকরিলীগ নামে পরিচিত এসব নেতাকর্মীরা চাকরির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায়  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকরিপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তালা ভেঙে ফেলা হয় এবং চাকরি প্রদানের আশ্বাসে চাকরিপ্রত্যাশীরা গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এর আগেও তারা একই দাবিতে উপাচার্য  অফিসে একাধিকবার তালা লাগানো ও ভাঙচুরের ঘটনায় লাখ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসসূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও চাকরি প্রত্যাশী আশিকুর রহমান জাপান, তৌফিকুর রহমান হিটলার, মাহমুদ হাসান লেলিন, টিটু, কাসেম, শিমুল ও মাসুদসহ ৭/৮ জন নেতাকর্মী উপাচার্য অফিসে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস থেকে চলে যেতে বলে। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস থেকে বের হতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের অফিস থেকে জোর করে রেব করে দেয়। পরে তারা উপাচার্য অফিসের এক কর্মচারীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে অফিসের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপাচার্য অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, অফিসে ঢুকেই ছাত্রলীগ নেতারা আমাদেরকে অফিস থেকে রেব হয়ে যেতে বলেন এবং চাকরি না দেয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অকথ্য গালিগালাজ করেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার টিএসসিসিতে একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, ইবি থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জনক ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। এ সময় প্রশাসনের নির্দেশে তালা ভেঙে ফেলা হয়।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতারা অফিসে তালা লাগানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাদের বাধার কারণে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে ছেড়ে যেতে পারেনি। দুপুর ২টার দিকে গাড়ি প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদেরকে লাইনের বাস-ট্রাকে বাদুর ঝোলা করে ক্যাম্পাসে ত্যাগ করতে দেখা গেছে।

এদিকে বিকেল ৩টার দিকে উপাচার্য অফিসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ও চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে চাকরি প্রত্যাশীদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং তাদেরকে এ বিষয়ে আশ্বস্থ করা হয়। বৈঠক থেকে প্রশাসন ভবন থেকে বেরিয়ে এসে চাকরি প্রত্যাশীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনে তৎক্ষণিক উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করি। একটা গুজবের দরুন সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিলো, পরে তাদেরকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, অফিস তালা ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং কার ইন্ধনে হয়েছে সেটাও জানি। তবে এর সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের খুব দ্রুত বিচার করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ মার্চ চাকরির দাবিতে চাকরিপ্রত্যাশী নেতারা উপাচার্য অফিসের অর্ভ্যথনা কক্ষে ভাঙচুর চালায়। ওই ঘটনার ৫ দিন পরেই ৩০ মার্চে তারা একই দাবিতে আবার উপাচার্য অফিসে ভাঙচুর চালায়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তারা একই দাবিতে উপাচার্য অফিস ভাঙচুর করে।