ইন্নাল হামদা অনিনমাতা লাকা অল মুল্ক, লা শারিকা লাক

মাথাভাঙ্গা মনিটর: জীবনের সমস্ত গুনাহ থেকে পরিত্রাণ আর আত্মশুদ্ধির জন্য পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ পবিত্র হজ পালন করেছেন। গতকাল সোমবার লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক উচ্চারণে পবিত্র আরাফাতের পাহাড় ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত করেছেন লাখ লাখ হাজি।

হাজিদের উপস্থিতিতে সৌদি আরবের মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে ওঠে। শাদা কাপড়ের ইহরাম বাঁধা হাজিদের অবস্থানের কারণে জাবালে রাহমত শাদা আর শাদায় একাকার। জোহরের নামাজের আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ মসজিদে নামিরাহ থেকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে পবিত্র হজের বয়ান ও খুতবা পাঠ করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল আশেখ। প্রতিবছরের মতো এবারো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০ লক্ষাধিক হাজি সৌদি আরবে হজ পালন করছেন। সৌদি সরকার কাবা শরিফের সংস্কার কাজের জন্য প্রতিটি দেশ থেকে হাজিদের কোটা কমিয়ে দেয়ায় এবার কম সংখ্যক হজব্রত পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে গাইডসহ ৯০ হাজার দুজন হজব্রত পালন করছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজার ৫৯১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮ হাজার ৪১১ জন। হজ শেষে বিমানের ফিরতি ফ্লাইট আগামী শনিবার ও সৌদিয়ার ফিরতি ফ্লাইট আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে।

এদিকে সৌদিআরব থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সৌদি সরকার হাজিদের নিরাপত্তায় প্রায় ৯৫ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে। আর মক্কার চারপাশে কমপক্ষে তিনশ কিলোমিটার জুড়ে তৈরি করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাবলয়। গত বছর প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজব্রত পালন করেছিলেন। মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি আরব সরকারের হজ মন্ত্রণালয় হাজিদের মাঝে বিনামূল্যে খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে হাজিদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

গ্র্যান্ড মুফতি খুতবায় বলেন, বর্তমানে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ নয়। ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার কারণে যেখানে সেখানে তারা মার খাচ্ছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। কেউ আমরা আমল নিয়ে, কেউ আমরা আকীদা নিয়ে বিভক্ত। মহান আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এ ধরনের বিভক্তি চাননি।

ইহরাম বাঁধা হাজিদের স্রোত আরাফাতের নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে তারা ভাবাবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই আরাফার ময়দানের ছবি, যেখানে এক হাজার চারশ বছর আগে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানে মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় নবীর কাছে সর্বশেষ ওহি নাজিল করেছিলেন, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম) পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম (সূরা আল মায়িদা, আয়াত-৩)।

চারদিকে পাহাড় ঘেরা আরফাতের ময়দান সমতল ভূমি। হাজিদের অনেকে আগের রাতেই সোজা উঠে যান আরাফার ময়দান সংলগ্ন রহমতের পাহাড়ে, যার নাম জাবালে রহমত। এখানে ওঠার পর হাজিরা সারাদিন কাটিয়ে দেন আল্লাহর করুণা ও মাগফেরাত কামনায়। হজের অন্যতম অংশ হিসেবে ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। সূর্য উদয়ের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত হাজিরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। খুতবা শেষে হাজিরা জোহর ও আছরের ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে জামাতে কসর নামাজ আদায় করেন। আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ বা অবশ্য পালনীয়।

আরাফার ময়দানে রাতযাপন শেষে হাজিরা মুজদালিফায় যান। সেখানে পাথর নিক্ষেপ শেষে ত্যাগের মহিমায় মহামহীয়ান আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি দিয়ে হাজিরা মাথা মুণ্ডন করেন। এরপর তারা ইহরাম ছেড়ে স্বাভাবিক পোশাকে মিনা থেকে মক্কায় পৌঁছে সাতবার ঘুরে কাবা-শরিফ তাওয়াফ করবেন। এরপর সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানোর পর তাদের আবার মিনায় তাঁবুতে ফিরতে হয়। জিলহজের ১১ এবং ১২ তারিখ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার (জোহরের ওয়াক্তের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত) সাথে সাথে হাজিরা তিন শয়তান অর্থাৎ ছোট, মেজ এবং বড় জামারাকে পাথর মারবেন। এরপর তারা মিনা ত্যাগ করে পবিত্র মক্কায় ফিরবেন।