ইউপি নির্বাচনেও এককভাবে লড়বে আওয়ামী লীগ!

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এ বোর্ডের প্রধান থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে কমিটি হবে, তাতে সংসদ সদস্যদের না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ঝামেলা হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ জানান, পৌরসভা নির্বাচনে যেভাবে বাছাই কমিটি করা হয়েছিল, সেখানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই কমিটিতে সংসদ সদস্য থাকবেন না। জেলা, উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকেরা থাকবেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য একজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। গত ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও একইভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নির্বাচন করবে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও মনোনয়নের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে। কারণ এটা নৌকা প্রতীকের নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন হবে কি-না, এ নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও দলীয় প্রতীকেই অনুষ্ঠিত হবে। বাছাই কমিটি থেকে কেন এমপিদের বাদ দেয়া হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঘিরেই সংসদ সদস্যদের রাজনীতি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একজন মনোনয়ন পেলে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাখোশ হন। এ ক্ষোভ-বিক্ষোভ সৃষ্টির পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব বেড়ে যেতে পারে। এসব কারণে প্রার্থী বাছাইয়ের দায় যাতে এমপিদের ওপর না পড়ে, সে কারণেই এমপিদের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিবে আওয়ামী লীগ: শুধু পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ নয়, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই এককভাবে অংশ নিবে আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে দলটির যুক্তি, যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের কোনো নির্বাচন নয়, তাই সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের এককভাবে নির্বাচন করা উচিত। এতে দলগুলো সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
জানা গেছে, হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় প্রতিকে অনুষ্ঠতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এককভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে চলছে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি। মনোনয়নের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোও পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবে অংশগ্রহণ আলাদা হলেও পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রচারণার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এক্ষেত্রে জোটের প্রচারণা টিম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য দেশব্যাপী ভোটারদের কাছে ভোট চাইবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, কোন স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের মতোই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ পৌরসভার চেয়ে অনেক বড় পরিসরে হবে এ নির্বাচন। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, বিদ্রোহীদের বোঝানো-সব মিলিয়ে এ নির্বাচন পরিচালনা করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।