আ.লীগ নেতা আজিজের আত্মসমর্পণ : জেলহাজতে প্রেরণ

দামুড়হুদা হোগলডাঙ্গার আলোচিত মিজান চেয়ারম্যান হত্যা মামলা ৪ বছর পার

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা হোগলডাঙ্গার আলোচিত মিজান চেয়ারম্যান হত্যা মামলার ৪ বছর পর অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আব্দুল আজিজ। তিনি গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত অপর দু আসামি আব্দুল মোমিন মাস্টার ও আনারুল এখনও পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান সপরিবারে তার নিজ গ্রাম হোগলডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে একদল সন্ত্রাসী দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে মিজান চেয়ারম্যানকে। স্ত্রী ডলি খাতুন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীদের নামে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আলোচিত ওই মামলায় হোগলডাঙ্গার রবিউল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৩৯), আব্দুল হান্নান (৪০), জমির উদ্দিন (৪২), দামুড়হুদা দশমীপাড়ার রোকনুজ্জামান রকু (৩৫), ভগিরথপুরের মাসুদ রানা (৩৭), নতিপোতার জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ও নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। রবিউল ছাড়া বাকি ৭ জন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহজাহান শেখ, পরিদর্শক রাম প্রসাদ ভক্ত, উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান এবং জিয়াউল হক পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন এবং ৫ বার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়। অবশেষে বছর দেড়েক আগে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরিত হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর শরীফ মঞ্জুর রহমান দীর্ঘ তদন্ত শেষে আড়াই মাস আগে দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত হানেফের ছেলে রবিউল, একই গ্রামের মৃত তুফনের ছেলে হান্নান, মৃত মোহাম্মদের ছেলে শহিদুল, আকবারের ছেলে জমির, ইসাহকের ছেলে আশাদুল, আমজাদের ছেলে আনারুল, মৃত মহি উদ্দিন সরকারের ছেলে রোকুনুজ্জামান, ভগিরথপুরের মাসুদ রানা, নতিপোতার জাহাঙ্গীর, ছুটিপুরের সোহাগ, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আব্দুল আজিজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন মাস্টারসহ মোট ১৪ জনের নামে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। এর মধ্যে ছুটিপুরের সোহাগ মারা গেছে। ওই মামলায় আব্দুল আজিজ গতকাল মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত অপর দু আসামি আব্দুল মোমিন মাস্টার ও আনারুল এখনও পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেনি। ঘটনার পর থেকেই আনারুল পলাতক রয়েছে। গত ১২ অক্টোরর রোববার মিজান হত্যাকাণ্ডের ৪র্থ বছর পার হলো। ওই দিন প্রয়াত মিজানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

মিজান চেয়ারম্যানের দু মেয়ে মিতুয়া (১৪) ও মিলি (৯) খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার অপেক্ষায় আজও দিন গুনছে। এ মামলার আসামি না হয়েও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আজিজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন উচ্চ আদালত থেকে নো অ্যারেস্ট, নো হ্যারেজ আদেশ নিয়ে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, মিজানুর রহমান মিজান নতিপোতা ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন। নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের সময় আত্মগোপনে চলে গেলে পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মিজান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সম্প্রতি উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।