আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ছোট দলগুলোর বড় আশা

স্টা রিপোর্টার: দলীয় পৌর নির্বাচনে ২০টি দল অংশ নিলেও ১৫টি দলেরই সাকুল্য ভোট ১৮ হাজার ৫৭০টি, এর মধ্যে একটি দল পেয়েছে মাত্র ৪৯ ভোট। কম ভোট পাওয়া এসব দলের কয়েকটির দাবি, নেতাকর্মীদের ভোট পড়লেও এই সংখ্যা এতো কম হওয়ার কথা নয়! আভাস মিলেছে ইউপি নির্বাচনে দ্বিগুণ তৎপর দেখা যাবে এই ছোট দলগুলোকে। ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা ভোটের একমাস পর যে পরিসংখ্যান এসেছে সে হিসাব অনুযায়ী, ৬৯ লাখ ৪ হাজার ২৩১ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫০ লাখ ৫২ হাজার ১৬০টি। ৭টি পৌরসভায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ২২৮ পৌরসভার ভোটের তথ্য এটি। ১৫টি দলের মধ্যে সবচেয়ে কম পাওয়া দলটি হলো বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জন্ম নেয়া প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল বা পিডিপি, ৪৯টি। ৪৯ জনের ভোট ব্যাংক নিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুজ্জামান জানান, দলীয়ভাবে প্রথম পৌর নির্বাচন হওয়ায় তাতে কোনো রকমে অংশ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চারটি পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত টিকেছিলেন একজন। একটি পৌরসভায় মাত্র ৪৯ ভোট পেয়েছে তারা। নেতাকর্মী ভোট দিলেও তো এত কম হয় না! এ নিয়ে আর ভাবছেন না তারা, কত ভোট পেলেন তা বিবেচ্য নয়। তারা ইউনিয়ন পরিষদে আরো বেশি প্রার্থী দেবেন দ্বিগুণ উদ্যমে। আগামী নির্বাচনে সব এলাকায় প্রার্থী দেয়ার ইচ্ছের কথাও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ভোট পেয়েছে ৫৩৮টি। নির্বাচনে মাত্র একজন প্রার্থী ছিলো তাদের। দলটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ৫শ ভোট পাওয়া কিন্তু কম বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ তাদের পার্টি করে। তবে টাকা আর বড় দলের জোয়ারে তারা ভোট পাননি। পরাজিত হওয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে ইউপিতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা জানান তিনি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ভোট পেয়েছে সাকুল্যে এক হাজার ২৬৭ ভোট, যদিও এ ফল মানতে নারাজ দলটি। দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পৌর নির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। নির্বাচনকে এ প্রহসন থেকে বের করে আনতে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ইউপি নির্বাচনেও অংশ নেবে সিপিবি। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের ভোটের ফল পাল্টানোর দিন এক সময় শেষ হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করে বলেন দুই হাজার ৯৪ ভোট পেলেও তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তিনি বলেন, পৌর নির্বাচনের রেজাল্ট ছিলো বানানো, স্রেফ বানিয়ে এ ফল ঘোষণা করা হয়েছে। কে কত ভোট পেল তা বিবেচ্য নয়। তাদের সমর্থক আছে অনেক বেশি, এ ধরনের ভোট করার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাবেন, ফাঁকা মাঠ দেবেন না তারা।

আবদুল কাদের বলেন, ক্ষমতাসীন দল সব সময় নিজেদের পক্ষে ফল নেবে, তাদের লোকবল বেশি। সময় তো সব সময় একরকম থাকবে না। ইউপি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী আরো বাড়বে, ভোটও বাড়বে। চলতি মাসে দেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল দেয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে সাড়ে সাতশর বেশি ইউপিতে ভোট হবে মার্চে। পর্যায়ক্রমে দেশের সাড়ে চার হাজার ইউপি ভোট শেষ করা হবে। পৌরসভার মতো ইউপিতেও চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট হবে। ইসিতে বর্তমানে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। ভোটের সংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৬ লাখ ৪১ হাজার ৫৭২ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ১৪ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ ভোট, জাতীয় পার্টি ৬৭ হাজার ৩৭৬ ভোট। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৪৭ হাজার ৪৬ ভোট; বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১ হাজার ৮৩৫ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১৫ হাজার ২৯৫ ভোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ১ হাজার ২৬৭ ভোট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ২৯২ ভোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি ২ হাজার ৭৭০ ভোট, খেলাফত মজলিস ২ হাজার ৯৪, জাতীয় পার্টি-জেপি ২ হাজার ৪১৪ ভোট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ ১৪৫ ভোট পেয়েছে। অন্যান্য দলের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট ২ হাজার ৫৬৪ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৫৩৮ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১৯৯ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১ হাজার ৯২১ ভোট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ৪৯ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫৬০ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১ হাজার ৫১৭ ভোট এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছে ৪০৫ ভোট। এর বাইরে বড় দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মোট ভোট ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৮০২টি, যা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।