আসছে নূর যাচ্ছে অনুপ

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতেরনতুন সরকার বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে উচ্চতর মাত্রায় নিয়ে যেতে আগ্রহী। ‘ইতিবাচক’ ও ‘ক্রমবর্ধমানউন্নয়নমূলক’ সম্পর্ক গড়তে পারস্পরিক সমস্যাগুলোআলোচনার মাধ্যমে মিটিয়েও ফেলতে চায় নয়াদিল্লি। বাংলাদেশ সফররত ভারতেরপররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সব সময়েই বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে।

সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবারপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীরসাথে পৃথক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদআলী ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন জানান, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনকে ফেরত দেবে ভারত।বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা হবেশিগগির।
সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভারতেরপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন। এ পত্রে মোদিদুদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চতর রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঘন ঘন বৈঠকেরমাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আগ্রহের কথা বলেন।এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথেসৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সুষমা আজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথেসৌজন্য বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়েবাংলাদেশ ও ভারত একমত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ভারতে ৬৫ বছরের অধিক বয়সেরএবং ১৩ বছরের কম বয়সীদের ৫ বছরের মাল্টিপল ভিসা সুবিধা প্রদান, ত্রিপুরারপালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি, ঢাকা-শিলং-গৌহাটির মধ্যে বাসসার্ভিস চালু, শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের প্রস্তাবিত নকশাপ্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর, আগরতলায় বাংলাদেশ ভিসা অফিসকে সহকারীহাইকমিশনে উন্নীতকরণ, মৈত্রী এক্সপ্রেসের ট্রেন, এসি কোচ ও যাত্রী সংখ্যাবৃদ্ধি, দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের সভাঅনুষ্ঠান এবং মেঘালয় সীমান্তে নতুন চারটি বর্ডার হাট স্থাপন।তবে এতোকিছু হলেও তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির প্রশ্নে কোনো সুখবর মেলেনি এ দিনের দুবৈঠক থেকে। এবারও বরাবরের মতোই অচিরেই চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদই মিলেছেশুধু।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকদ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীআবুল হাসান মাহমুদ আলী। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১০ হাজার টনখাদ্যশস্য ভারতের অপর অংশ থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশেরসম্মতির কথা জানানো হয়। বৈঠক শেষে মাহমুদ আলী বলেন, ত্রিপুরার জনগণমুক্তিযুদ্ধকালে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সে কারণেসৌজন্যমূলকভাবে ছোট ছোট ট্রাকে এই খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।এই খাদ্যশস্য পরিবহনের পর সড়ক অবকাঠামো অবস্থার বিশেষ মূল্যায়ন করা হবে।বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময়ের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

মাহমুদআলী আরও বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের বিষয়টি উত্থাপনকরার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণঐকমত্য গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। তিনি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরেরবিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাহমুদ আলী আরও বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকেস্থল সীমান্ত চুক্তি ১৯৭৪ এবং এর ২০১১-এর প্রটোকলটি অনুসমর্থনের জন্যভারতীয় পক্ষকে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয়। জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিসম্পাদনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিষয়টি ভারতীয়রাজ্যসভায় সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।মাহমুদ আলী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান, অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি।

ভারতীয়মুখপাত্রের ব্রিফিং: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, সুষমা স্বরাজেরসফর গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ। তিনি প্রথম সফরে বাংলাদেশে আসার মানে হলপ্রতিবেশীদের প্রতি বিশেষ ফোকাস।ভারতের নতুন সরকারের পক্ষ থেকে সুষমাস্বরাজ শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে এসেছেন। মুখপাত্র বলেন, আমাদেরগন্তব্য অবিচ্ছেদ্য। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতেদেয়া হবে না। ভারত ও বাংলাদেশ উচ্চপর্যায়ে যুক্ত থাকতে আগ্রহী।

একপ্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণরাজনীতি নিয়ে ভারত নাক গলায় না। বাংলাদেশের সঙ্কীর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেযুক্ত হবে না ভারত।কানেকটিভিটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কানেকটিভিটি বলতে দু দেশের জনগণের চলাচল, জ্বালানির সঞ্চালন এবং ধারণারবিনিময়। ভারত বর্তমানে ভেড়ামারা সাবস্টেশন দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতবাংলাদেশে সরবরাহ করে। এখন ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে ১০০মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে ভারত সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করেন সুষমা। এ সময়সুষমা স্বরাজ তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানপ্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীওসুষমা স্বরাজের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণজানিয়েছেন।শামীম চৌধুরী বলেন, বৈঠকে স্থল সীমানা চুক্তি, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্তে বিএসএফের হত্যার বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করারব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে খুব ইতিবাচক এবং ক্রমশ উন্নয়নশীল সম্পর্ক দেখতেচাই। আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা পারস্পরিক সব বিষয়ের সমাধান করতে চাই।’
শামীমচৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোদ্রুত সমাধানের কথা বলেছেন। তিনি এর সঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাবজায় রাখতে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শত্রুদারিদ্র্য এবং এদারিদ্র্য নির্মূলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ প্র্রধানমন্ত্রীবলেছেন, সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানোহবে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের জন্য বাংলাদেশের মাটি নয়।
নূর হোসেনসহবাংলাদেশের যেসব অপরাধী ভারতে লুকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী তাদের ফেরত দিতেবলেছেন বলেও জানান তার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড দ্রুত সমাধানকরার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন।

ওদিকে সুষমা বলেছেন, ‘ল্যান্ডবাউন্ডারি বিল পার্লামেন্টে আছে এবং ইট ইজ আন্ডার অ্যাকটিভ কনসিডারেশন।’ সুষমা বলেছেন, ঢাকায় আসার আগে তিনি মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ‘মমতা সেন্টগুড উইশেষ টু আওয়ার প্রাইম মিনিস্টার অ্যান্ড শি থিংকস মোর পজিটিভ।’বাংলাদেশ-ভারতযৌথ উদ্যোগের প্রকল্প রামপালের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র দ্রুতবাস্তবায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় জোর দিয়েছেন বলেজানান শামীম চৌধুরী। তিনি বলেন, আগরতলায় চাল পরিবহনের জন্য বলেছেন, রোডকন্ডিশন ভালো করা দরকার। এ ব্যাপারে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভারতের সহায়তাচেয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আগরতলার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিকসম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সেখানকার মানুষ আমাদেরকে সহায়তা করেছে। সেজন্যসেখানে চাল পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ যা যা করার করবে।

প্রধানমন্ত্রীমৈত্রী ট্রেনের বগি বাড়ানো, বাস সার্ভিস বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমাদেরনিউক্লিয়ার প্রকল্পে ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতের ভাবাতে ট্রেনিং সুবিধা দেয়ারকথা বলেছেন। আসাম-নাগাল্যান্ডের রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুরে পাইপলাইন দিয়েতেল আনার জন্য বলেছেন।এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত-চীন-মিয়ানমারের জোট বিসিআইএমনিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শামীম চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, এটা করা দরকার এবং তিনি আশা করেন, এ চারটাকান্ট্রি একসঙ্গে কাজ করবে।’
বাংলাদেশ-ভারত-ভুটানের ত্রিপক্ষীয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজ।