আশরাফ মহীউদ্দীন আলমগীরসহ বাদ পড়ছেন ৩৮ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: পরিস্থিতির নাটকীয়তায় নির্বাচনকালীন ছোট মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করার আগে এতে বার বার পরিবর্তন আসছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, পুরনো মন্ত্রীদের মধ্য থেকে বাদ পড়ছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরও। তাদের সাথে প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও বাদ পড়তে যাচ্ছেন। এ কারণেই দিনভর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দিকে সবাই চেয়ে থাকলেও নতুন আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বণ্টন এবং পুরনো মন্ত্রীদের পদত্যাগের প্রজ্ঞাপন হয়নি। দুপুর পর্যন্ত জানা যাচ্ছিলো, পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে ৩০ জন বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তবে সন্ধ্যায় বাদ পড়াদের সংখ্যা ৩৮ জনের জনে দাঁড়ায় বলে ওই সূত্র জানায়।
সূত্রটি সন্ধ্যায় জানিয়েছিলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মাত্র ১৩ জন পুরনো মন্ত্রীই থাকছেন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায়, সোমবার শপথ নেয়া আটজনকে নিয়ে যার সদস্য সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২১ জনে। তখনকার হিসাবে পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে থাকছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ওবায়দুল কাদের, জি এম কাদের, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাছান মাহমুদ, এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ২১ কি এরকম কোনো বিশেষ ইঙ্গিত দেয় যে ৩০ সদস্যের মন্ত্রিসভার বাকি নয়টি পদ বিএনপির জন্য থাকছে?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি সূত্র এক্ষেত্রে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের মঙ্গলবার সকালে দেয়া একটি বক্তব্যের দিকে দৃষ্টিপাত করেন, যেখানে তিনি বলেছেন, বিএনপির জন্য এখনো সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার দ্বার খোলা। বাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে ৬ থেকে ৭টি (মন্ত্রী পদ) দেয়া হয়েছে, বিএনপিকে দিতে সমস্যা কী? প্রয়োজনে ১০ থেকে ১২টি দেব।  সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক করে সংলাপের বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ চেয়ে খালেদা জিয়ার আহ্বানের পর মন্ত্রিসভা নিয়ে আবার পর্যালোচনা হয়। এতে এটাই বোঝা যায়, কেন আরো আট থেকে নয় জন পুরনো মন্ত্রী বাদ পড়তে যাচ্ছেন, বলেছে ওই সূত্র।
এরপর গভীররাতে ওই সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফ, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও কামরুল বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তবে থাকছেন একে খন্দকার ও রমেশ চন্দ্র সেন। এটি চূড়ান্ত হলে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ জনে। মঙ্গলবার নতুন করে আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেয়ার আগে সোমবার পর্যন্ত মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫০, যাদের মধ্যে ৩১ জন ছিলেন মন্ত্রী, আর ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী। নতুন আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞাও বলেছিলেন, মঙ্গলবারই সব জানা যাবে। মঙ্গলবার সকালে নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন, পুরাতনদের মধ্য থেকে অনেকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আদেশ জারি ছাড়াও আরো একটি ঘটনা ঘটবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. ইফতিখার হায়দার মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জানিয়েছিলেন, যেকোনো সময়ই আদেশ জারি করা হবে। দুপুরের পরে এ বিষয়ে আবারো ইফতিখারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ইফতিখার বলেন, রাত ৮টার পরে আদেশ জারি করা হতে পারে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি বলেন, আজ এসব আদেশ জারির সম্ভাবনা ক্ষীণ। আদেশ জারি করতে বিলম্ব হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কোনো কারণ নেই। আজ আদেশ জারি না হলেও তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। এরপর রাতে আর প্রজ্ঞাপন হয়নি।
সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী হিসাবে ছয় মন্ত্রীর শপথ: সচিবালয়ের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যই ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, তিনি সর্বদলীয় সরকারে থাকছেন কি-না। খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার তাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের বিদায়ও জানিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রণালয়ের বিদায় অনুষ্ঠানে আবদুর রাজ্জাককে চোখ মুছতে দেখা যায়। আর এক বছর আগে মন্ত্রিপরিষদ সম্প্রসারণের সময় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে শুধু সংস্কৃতিমন্ত্রী বনে যাওয়া আবুল কালাম আজাদও নিজের মন্ত্রণালয়ে বিদায়ী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের আগে সোমবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদায় জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমিন ও প্রতিমন্ত্রী মোতাহের হোসেনও।
সচিবালয়ে ঢুকতে বাধা: নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন এবং বাদ পড়াদের প্রজ্ঞাপন জারির সম্ভাবনায় অনেক রাত পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা অফিসে ছিলেন। খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরাও দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে ছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর সংবাদকর্মীদের ঢুকতে বাধা দেয় সচিবালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা। দিনভর সচিবালয়ে থাকা কয়েকজন রাত ৮টায় থেকে কয়েকজন সাংবাদিক সচিবালয়ের বাইরে যান। তারা পুনরায় ঢুকতে গিয়ে বাধা পান। কারণ জানতে চাইলে ফটকে কর্তব্যরত এপিবিএন সদস্য ফরাজুল বলেন, সন্ধ্যার পর গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে সচিবালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র এবং সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতিপত্র থাকলে ঢুকতে কোনো বাধা নেই।