আলোচনায় না বসলে ঈদের পর হরতাল

 

জয়পুরহাটে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার নির্বাচন নিয়েআলোচনায় না বসলে ঈদের পর হরতাল-অবরোধ করা হবে। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এসরকারের পতন ঘটানো হবে। গতকাল রোববার বিকেলে জয়পুরহাটে এক জনসভায়খালেদা জিয়া বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা হরতাল দেয়ারদাবি তোলার পর খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।

জয়পুরহাটে গতকাল সকাল থেকেইছিলো বৃষ্টি। শহরের রামদেব বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গোড়ালি-ডোবাপানিতে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলথেকে আসা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।রোববার দলেরচেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুখ থেকে আন্দোলনের পরবর্তী দিক নির্দেশনা শোনারঅপেক্ষায় প্রকৃতির বৈরিতাকে উপেক্ষা করে মাঠে আসতে শুরু করেন তারা বেলা১১টা থেকে। বেলা ৪টায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া তারভাষণে বলেন, ‘এ সরকার জবর দখলকারী, অবৈধ সরকার। আসন্ন ঈদের পরে এ সরকারেরবিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তেলা হবে। সেই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতথাকুন।’ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জয়পুরহাট শহরেছিলো মানুষের সারি। জনসভার মাঠটিও ছিলো পূর্ণ। মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়েদলের নেতা-কর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। জয়পুরহাট জেলা বিএনপি আয়োজিত এজনসভার সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান। সভা শুরু হয়েছিলোবেলা ২টায় স্থানীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের বক্তৃতা দিয়ে।

খালেদা জিয়া ঠিক এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠেদাঁড়িয়ে দলের নেতা-কর্মী ও জেলার সাধারণ মানুষ তার বক্তব্য শুনেছেন।তাদের অভিনন্দন জানিয়েই বক্তব্য শুরু করে তিনি বলেন, ‘দেশে আজ কোনো বৈধসরকার নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশ মানুষ অংশ নিয়েছে। বাকি ৯৫ ভাগমানুষ আমাদের আহ্বানে সাড় দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাননি। তাই আওয়ামী লীগনিজেদের জনপ্রতিনিধি দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে জনপ্রতিনিধি নয়। কাজেই সংসদবাতিল হয়নি। আমরাই এখনো জনপ্রতিনিধি। আমি সরকারেরও প্রতিনিধি নই, বিরোধীদলেরও নই। আপনারা আমাদের কথা শুনেছেন তাই আমি আপনাদের প্রতিনিধি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আমাদের এই সরকারকে বৈধতা দিতে বলছে। এর মধ্যে দিয়ে তারা নিজেরাই প্রমাণ করছে তারা অবৈধ।’ তিনিবলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। বাম-ডান, ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আমরা সেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করব। সেখানেজনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। এবং জনগণকে নিয়েই এই অবৈধ, খুনি, লুটেরাসরকারকে বিদায় করা হবে।’ তিনি বলেন, এ সরকার পদ্মা সেতু, কুইক রেন্টাল, শেয়ারবাজারসহ রানা প্লাজার সাহায্যের জন্য আসা যে টাকা আত্মসাৎ করে সুইসব্যাংকে জমা করেছে তা নিরপেক্ষ তদন্ত করে লুটেরাদের বিচার করতে হবে। টাকাদেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমালোচনা করে বলেন,দুদক একচোখা কাজ করছে। কেবল বিএনপিকে হয়রানি করে। আওয়ামী লীগেরদুর্নীতিবাজদের ধরে না।

র‌্যাব প্রসঙ্গে: বক্তব্যে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রসঙ্গে খালেদাজিয়া বলেন, ‘আমরা র‌্যাব গঠন করেছিলাম। তখন তারা ভালো কাজ করেছে। বড় বড়জঙ্গিদের ধরেছে। দমন করেছে। এখন র‌্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশে দলীয় বাহিনীহিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। র‌্যাবকে আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনী হিসেবেব্যবহার করছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে খুন করানো হচ্ছে।নারায়ণগঞ্জের ঘটনা, ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমকে গুম করার ঘটনা তারপ্রমাণ।’ তিনি র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে নতুন করেনতুন সংগঠন সৃষ্টি করা হবে।

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ: খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকারভালো মানুষদের সম্মান দিতে জানে না। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড.মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়ে জাতিকে গর্বিত করেছেন। অথচ এ সরকারতাকে পদে পদে অপমান ও অসম্মান করেছে, আর প্রশংসা করেছে ওসমান, হাজারী, তাহেরদের মতো চিহ্নিত গডফাদারদের। মানুষ এ সরকারের কাছে নিরাপদ নয়।

কৃষি ও কৃষক: বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার বিনা মূল্যে সার দেয়ার কথা বলেওদফায় দফায় সার, বীজ ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। কৃষক কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে পর্যুদস্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কৃষকদেরউন্নতি হবে না।

অর্থনীতি: দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়াবলেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটকরে ব্যাংকগুলোকে শেষ করছে। সন্ত্রাস, হত্যা ও চাঁদাবাজির কারণে কোনোবিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশের ব্যবসায়ীরাও নতুন বিনিয়োগ করছেন না।ব্যবসা-বাণিজ্যে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুত, গ্যাস, পানি ওনিরাপত্তা দিতে না পারায় পোশাকশিল্পও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়াবলেন, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো অবদান নেই। তারা সীমান্ত পাড়িদিয়ে ভারতে গিয়েছিলো। বিএনপি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার দল। শহীদ জিয়াউররহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ করেদেশ স্বাধীন করেছেন। বিএনপি আসল মুক্তিযুদ্ধের দল। জিয়াউর রহমান দেশে দেশেবহুদলীয় গণতন্ত্রেরও প্রবর্তক। আওয়ামী লীগের জনকই আওয়ামী লীগকে বিলুপ্তকরে বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। জিয়া এসেই বহুদলীয়গণতন্ত্র চালু করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেন। কাজেই বলা যায় জিয়াউররহমানই আওয়ামী লীগকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন।

হেফাজত ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা: খালেদা জিয়া বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় শাপলা চত্বরেরাতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেহামলা হয়েছে। খ্রিস্টানদের গির্জায় হামলা করেছে। রামুতে বৌদ্ধদেরউপাসনালয়ে হামালা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই সংখ্যালঘুদের ওপরহামলা হতে থাকে। আমরা তাদের সংখ্যালঘু বলি না। আমরা সবাইকে বলি বাংলাদেশি।এসব বাংলাদেশি নিয়েই ঈদের পরে বৃহত্তর গড়ে তুলে এই অবৈধ লুটেরা সরকারকেহটাতে হবে।’ এ সময় মাঠ থেকে ‘হরতাল-হরতাল’ শব্দ উঠলেও তিনি বলেন, ‘সব হবে।আমাদের সাথে আলোচনায় না বসলে ঈদের পর হরতাল-অবরোধ হবে।’

এর আগেসভায় বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে।তারেক রহমানসহ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়াহচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে বলেছেন দেশেরলোক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নিয়েছেন। এ বক্তব্যের মধ্যদিয়েতিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।সভায় আরও বক্তব্যদেন বিএনপির নেতা জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, মঈন খান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মাহবুব উদ্দিন, মিজানুর রহমান, আসাদুল হাবিবসহকেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।