আলমডাঙ্গা খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান রুন্নুকে ধরতে পুলিশের ৬ ঘন্টার অভিযান ব্যর্থ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুকে ধরতে পুলিশ টানা ছয়ঘন্টার ব্যার্থ অভিযান চালিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালানো হয়। তবে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই চেয়ারম্যান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর পুলিশ খালিহাতে ফিরে আসে।

চেয়ারম্যান রুন্নুকে ধরতে পুলিশি অভিযানের প্রথমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মোটা মোটা রডের দেয়া গ্রিলসহ শক্ত দরজা। ভোর থেকেই দরজা খোলার পুলিশি আহ্বানে শাড়া দেয়া হয়নি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হাজির হয় গ্রামে অসংখ্য নারী পুরুষ। তারাও গড়ে তোলেন শক্ত পাঁচিল। একেতো লোহার গরাদ, পরে গণপাঁচিল। পুলিশ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে পড়ে যায় বেকায়দায়। পুলিশের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। টান টান উত্তেজনার এক পর্যায়ে পুলিশের তরফে জনগণকে সরে যাওয়া ও কমপক্ষে ৬টি মামলার আসামি চেয়ারম্যান রুন্নকে আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো হয়। অপরদিকে বাড়ির পেছনটা হয়ে পড়ে অরক্ষিত। জনশ্রুতি, ওই বাড়ির পেছন থেকে রুন্ন চেয়ারম্যান সরে পড়ার পরই পুলিশ বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সুযোগ পায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করে আছে। কিন্তু, শতশত নারীসহ গ্রামবাসীরা বাড়ির ভেতরে পুলিশকে ঢুকতে দিচ্ছেনা। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এভাবে গ্রামবাসী ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। টানা ছয়ঘন্টার রক্তপাতহীন অভিযানের পর সকাল ১০টায় পুলিশ বাড়ির ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পায়। তিনজন গ্রামবাসী, দুইজন ইউপি সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে নিয়ে পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকলেও ওই চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায়নি।

অভিযান শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, তিওরবিলা গ্রামে ঘরবাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় ছয়টি মামলা রয়েছে। ভোরে মামলার আইও গেলে চেয়ারম্যান তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। আলমডাঙ্গার ওসি তদন্ত গেলেও খারাপ আচরণ করে। পুলিশ অতি ধৈর্য্যের সাথে অভিযান করেছে। মানুষের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে শক্তি প্রয়োগ না করে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। চেয়ারম্যান গ্রেফতার না হলেও অভিযান সফল হয়েছে বলে মনে করি।

চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন জানান, বাড়িতে ঢুকে পুলিশ তার স্বামী ও অবৈধ কোনো কিছুই পায়নি। এ সময় পুলিশ তল্লাশি শেষ করে ফিরে যায়।

অভিযানে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আতিয়ার রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ, মহিলা পুলিশসহ অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত: খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে দ্বিতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। গত ৬ জুন তিওরবিলা গ্রামে ক্লিনিক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যাকাণ্ডের পর বেশকিছু বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়া ও লুটপাটের নেতৃত্ব দেন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। এ অভিযোগে আলমডাঙ্গা থানায় ছয়টি মামলা দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্থরা। ওই মামলায় গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালায়।