আলমডাঙ্গার বেতবাড়িয়ায় গৃহবধূর দাফনের ৪ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

ময়নাতদন্ত শেষে পিতার বাড়ি এরশাদপুরে পুনর্দাফন সম্পন্ন : পাল্টপাল্টি অভিযোগ
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার বেতবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ মিতার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। মিতার পিতা জিনাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার সকালে লাশ উত্তোলন করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পিতার বাড়ি এরশাদপুর গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
জানা গেছে, ৬ মাস আগে আলমডাঙ্গার কলেজপাড়ার জিনাল উদ্দিনের অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক স্কুলপড়ুয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মিতা খাতুনের বিয়ে হয় বেতবাড়িয়া গ্রামের আমিরুলের ছেলে বাদলের সাথে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের বাদলের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মিতা খাতুন ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বলে স্বামী পক্ষের লোকজন দাবি তোলে। সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের তৎকালীন ইনচার্জ এসআই রতনুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লাশ উদ্বার করে সুরতহাল রিপোর্ট করেন। মিতার পিতা ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি চাইলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওই দিন রাত ১২টার সময় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। লাশ দাফনের ৩ মাস ৮ দিন পর গৃহবধূর মিতার পিতা জিনাল উদ্দিন বাদী হয়ে মিতার স্বামীসহ ৫ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মিতার লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের আদেশ দেন।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ কামরুল হাসানের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করেন। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে বেতবাড়িয়া গ্রামে পুনর্দাফন করতে গেলে গৃহবধূ মিতার পিতা জিনাল গ্রামবাসীর রোষানলে পড়ে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে নেয়। গ্রামবাসী দাবি তোলে গৃহবধূ মিতাকে কেউ হত্যা করেনি। দাবি কৃত ২ লাখ টাকা না দেয়ায় লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করেছে তার পিতা। এ লাশ যখন তোলা হয়েছে গ্রামের মাটিতে দাফন করতে দেয়া হবে না। গ্রামাবাসীর বাধার মুখে মৃত মিতার পিতা বাধ্য হয়ে বেতবাড়িয়া গ্রাম থেকে লাশ নিয়ে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার এরশাদপুরে দাফন কাজ সম্পন্ন করে।
এ ব্যাপারে গৃহবধূ মিতার পিতা জিনাল বলেন, আমার মেয়েকে যৌতুকের কারণে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। যে দিন মেয়ে মরে যাবার সংবাদ পাই তখন স্থানীয় মেম্বারসহ অনেক লোকজন আমাকে শাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি মামলা করতে চাইলেও আমাকে মামলা করতে দেয়নি। আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের খুনিদের বিচার চাই। তিনি হাসপতালে ময়নাতদন্ত শেষ সাংবাদিকদের আরো জানান, মিতার স্বামী বাদল ও তার বোনাই ফিরানিতে আমাদের বাড়িতে এলে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে অসতর্কতাবশত আগুন লেঘে যায়। এতে আংশিক মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর জামাই বাদল নতুন মোটরসাইকেল দাবি করে। আমি দিতে না পারাই আমার মেয়ে মিতাকে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন করতো। এ কারণেই আমার মেয়েকে মেরে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে আত্নহত্যা করেছে বলে প্রচার করে।
অপরদিকে মিতার স্বামী জানান, আমাকে পছন্দ নয় বলে বিয়ের পর থেকেই মিতা সংসার করবে না বলে জানায়। মাঝে মধ্যে মিতা তার পিতার বাড়িতে চলে যেতো। সে মারা যাবার আগের দিন মিতার বোনাই গোবিন্দপুরের রশিদের ছেলে সুজন মারধর করে বাড়িতে রেখে যায়। পরদিন দুপুরে সবার অলক্ষ্যে সে আত্মহত্যা করে। এছাড়া মিতার পিতার বাড়ির পাশের সাগর নামের একটি ছেলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, এই প্রেমের কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায় বাদল। মিতার মৃত্যুর পর থেকেই মিতার মাদকাসক্ত পিতা ২ লাখ টাকা চেয়ে বিভিন্ন রকমের হুমকি দিতে থাকে। টাকা চাওয়া বিষয়টা মোবাইলফোনে রেকোর্ড করা আছে।
এ ব্যপারে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাফিজুর বলেন, লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রির্পোট হাতে এলে প্রকৃত রহস্য জানা যাবে।