আলমডাঙ্গার নির্মাণ শ্রমিক কুষ্টিয়ার জগতিতে কাজ করতে গিয়ে বিপত্তি : সেপটিক ট্যাংকের বিষক্রিয়ায় দু রাজমিস্ত্রির মৃত্যু

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া শহরতলীর জগতিতে সেপটিক ট্যাংকের বিষক্রিয়ায় শাহিন ও আশিক নামের দু রাজমিস্ত্রীর মৃত্যু হয়েছেন। এ ঘটনায় মিঠু নামের আরো একজন অসুস্থ হয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরতলীর জগতি এলাকার আনিস মোল্লার বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন আলমডাঙ্গা কালিদাসপুর ইউনিয়নের পাকুলা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে শাহিন (২৫) ও পার্শ্ববর্তী পাইকপাড়া গ্রামের শাহিন মোল্লার ছেলে আশিক (২২)। এ ঘটনায় মিঠুন (২৫) নামে আরেক নির্মাণ শ্রমিক গুরুত্বর অসুস্থ্য অবস্থায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে ওই এলাকার আনিসুল ইসলামের বাড়িতে নির্মাণ কাজ করছিলো শাহিন, আশিক ও মিঠুন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিল্ডিং এর কাজ করার সময় সেপটিক ট্যাংকের ভেতর পড়ে যান শাহিন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আশিক ও মিঠুন দুজন ট্যাংকের ভেতর পড়ে যান। এতে শাহিন ও মিঠুন তলিয়ে যান। মিঠুনেরর আত্মচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে শাহিন ও আশিককে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের শাহীন আলীর ছেলে আশিক, একই গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে মিঠু এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে শাহীন বেশ কিছুদিন ধরে কুষ্টিয়া শহরতলীর জগতির বাসীন্দা ব্যাংকার আনিসুর রহমান ওরফে আনিস মোল্লার বিল্ডিং নির্মাণের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল রোববার সকালে তারা ৩ জন আনিস মোল্লার বিল্ডিং নির্মাণ কাজে যোগ দেন। সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা তৈরীর এক পর্যায়ে ট্যাংকের ভেতরে নামলে সৃষ্ট গ্যাসের বিষক্রিয়ায় নির্মাণ শ্রমিক আশিক ও শাহীনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত হয়েছেন অপরজন মিঠু।

কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম জানান, আনিস মোল্লার নবনির্মিত বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা তৈরি করছিলেন রাজমিস্ত্রিরা। সকালে ট্যাংকের ভেতরের কাঠ ও বাঁশ বের করার জন্য শাহিন ও আশিক ট্যাংকের ভেতরে ঢুকলে সাথে সাথে তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় ওপরে থাকা মিঠু মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক আশিক ও শাহীনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ জেনারেল হাসপাতালমর্গে পাঠায়। সেপটিক ট্যাংকের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আশরাফুল হাসান অঞ্জন জানিয়েছেন। গুরুতর আহত মিঠুকে প্রথমে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার এক পর্যায়ে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বিকেলে তাকে রাজশাহী নেয়া হয়। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিঠু মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শোকের কালছায়া নেমে আসে। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ নিকটজনের বুকফাটা আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠে।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, নিহত আশিক ও শাহীন ইতঃপূর্বে নছিমন-করিমন চালাতো। নছিমন-করিমন পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নানা বিধি নিষেধ, পাখিভ্যানের দৌরাত্বের কারণে তাদের উপার্জন একেবারে কমে যায়। এমতাবস্থায় কয়েক মাস আগে থেকে তারা মিঠুর সাথে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দেন।

নিহত আশিক অবিবাহিত। ৪ ভাইয়ের মধ্যে ছোট। অন্যদিকে, ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে নিহত শাহীন সবার বড়। তিনি ছিলেন বিবাহিত। ২ সন্তানের বাবা। ছেলে সাজিবের বয়স ৬ বছর ও মেয়ে সাদিয়ার বয়স মাত্র ৪ বছর। অবুঝ ২ সন্তানকে নিয়ে নিহত শাহীনের স্ত্রী অথৈই সাগরে পড়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যার পর আশিক ও শাহীনের লাশ কুষ্টিয়া থেকে নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে রাত ১০টার দিকে স্ব-স্ব গ্রামের গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়েছে।