আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গায় দু সন্তানের জননীর পোড়া লাশ উদ্ধার

শ্যালককে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে নয় ছয় : দাম্পত্য কলহের পর

 

শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশে আগুন দেয়ার অভিযোগ তুললেও শেষ পর্যন্ত আপস?

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা গ্রামের দু সন্তানের জননী বুলবুলি খাতুনের অঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে মৃত্যু নাকি হত্যার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আলামত নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা? এ প্রশ্নের জবাব জানতে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বুলবুলি খাতুনের মৃতদেহ গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীর গ্রাম নতিডাঙ্গার কবরস্থানে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়।

বুলবুলি খাতুনের স্বামী তানসেন বিয়ের পর কয়েক দফা যৌতুক আদায়ের পর বুলবুলির ভাই শাহীন রেজাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে নিকট এক আত্মীয়কে দেখিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা নেয়ার পরই চোখ উল্টায়। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের এক পর্যায়ে গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলের তেলে আগুন লেগে বুলবুলি পুড়ে মারা যায় বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করে। লাশ দেখেই স্থানীয় অনেকে প্রশ্ন তুলে বলেন, যে মোটরসাইকেলের তেল পড়ে আগুন ধরেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সেই মোটরসাইকেল কীভাবে অক্ষত থাকলো? কেনই বা বুলবুলির মুখ বুক পড়লেও চুল পুড়লো না? অভিন্ন প্রশ্ন তোলে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করলে তানসেনের লোকজন লাশ উদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে লাশ নিয়ে টানা হেঁচড়াও হয়। অবশ্য পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিকটজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়।

লাশ ময়নাতদন্ত করাকালে মর্গচত্বরে দাঁড়িয়ে বুলবুলির পিতাপক্ষের লোকজন অভিযোগ তুলে বলেন, আগুনে পুড়ে মরলে কী লাশের জিহ্বা বের হয়ে দাঁতের নিচে চাপা পড়ে? মুখ পুড়লো অথচ চুল পুড়লো না। শ্বাসরোধ করে হত্যার পরই লাশে আগুন দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগে যখন মামলা করা হবে বলে জানানো হয়, তখনই বুলবুলি খাতুনের স্বামী পক্ষের লোকজন বুলবুলির ভাইদের পাওনা ৪ লাখসহ ৫ লাখ টাকা প্রদান এবং দু সন্তানের নামে ৫ বিঘা জমি লিখে দেয়ার প্রস্তাবে আপসের কথা বলা হয়। রহস্য আরো দানা বাধে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ওই প্রস্তাবে বুলবুলির পিতা পক্ষ মামলা থেকে পিছু হটে বলে জানা যায়। পুলিশ বলেছে, বুলবুলি খাতুনের মৃত্যু রহস্যজনক। থানায় অপমৃত্যু মামরা রুজু করে লাশ ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তও চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে কি-না তা তখন বোঝা যাবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হায়দারপুর গ্রামের বাহার আলীর মেয়ে বুলবুলি খাতুনের সাথে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাতিডাঙ্গা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে তানসেনের বিয়ে হয় আনুমানিক ১৪ বছর আগে। বিয়ের পর এদের সংসারে আসে এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে তাজুল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে নূপুরের বয়স তিন বছর। বিয়ের সময় ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়া হয় বলে বুলবুলি খাতুনের পিতা পক্ষের লোকজন জানিয়ে বলেছে, বুলবুলির স্বামী তাজুলের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বুলবুলির ভাই শাহীন রেজাকে বিদেশে পাঠাবে বলে কয়েক দফায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বিদেশে পাঠানো দূরের কথা সেই টাকা ফেরতও দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলেই বুলবুলির ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসতো। তানসেন ও তার মাসহ পরিবারের অন্যরা নির্যাতন করলেও বুলবুলি তার দু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নিতো। এরই মাঝে লাশ হলো বুলবুলি। হত্যার পর আগুন দিয়ে পোড়ানোর আলামত স্পষ্ট বলেও মন্তব্য করেন তারা।

স্বামীপক্ষের লোকজন অবশ্য বলেছে, স্বামী তানসেন বাড়ি ছিলো না। সকাল ১০টার দিকে ঘর থেকে কেরোসিনের লেম্প ধরিয়ে বের হওয়ার সময় ঘরে থাকা মোটরসাইকেল থেকে পড়া তেলে আগুন ধরে যায়। সেই আগুনে পুড়ে মরে পড়ে ছিলো বুলবুলি। বুলবুলির ছেলে বাড়ি ফিরে ঘরে আগুন দেখে চিৎকার দেয়। তানসেনের চাচাতো ভাই বকুলসহ প্রতিবেশীদের অনেকেই ঘরে ছুটে গিয়ে আগুন নেভায়। মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। পরে ঘরে ঢুকে লোকজন দেখে পড়ে আছে বুলবুলির মৃতদেহ। এ বর্ণনা দেয়ার সময় কিছু অসঙ্গতিও ফুটে ওঠে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার লুৎফুল কবির, এসআই মোস্তাফিজ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ দেখেই রহস্য বলে মন্তব্য করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের কথা জানালে গ্রামের অনেকেই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশি সন্দেহ আরো গভীর হয়।

গতরাতে জানা গেছে, বুলবুলির পিতাপক্ষের সাথে স্বামী পক্ষ নগদ টাকা ফেরতসহ দু সন্তানের নামে ৫ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার শর্তে প্রাথমিক অলিখিত আপস হয়েছে।