আম-লিচুর বাগান নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে

মাঝ বোশেখেও মেহেরপুরে বৃষ্টির দেখা নেই!হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

 

মহাসিন আলী: বোশেখে মাঝামাঝি এসেও মেহেরপুরে বৃষ্টির দেখা না মেলায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে আম-লিচুর বাগান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাগানমালিক ও লিজগ্রহীতারা। তীব্র তাপপ্রবাহে আম-লিচুর বোটা শুকিয়ে ঝরে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন বাগানমালিক ও লিজগ্রহীতারা।অনেকে বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিয়ে বাগানে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন। আবার অনেকে গাছের আমে স্প্রের মাধ্যমে পানি ও বিষ ছেটাচ্ছেন। এদিকে ভ্যাপসা গরমে মেহেরপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মেহেরপুর আম-লিচুর জেলা হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আম-লিচুর উপযোগী আবহাওয়ার কারণে দিনে দিনে এজেলায় আম-লিচুর বাগান বৃদ্ধি পেয়েছে। এজেলার ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম সারাদেশে সমাদৃত। এ জেলার পাশাপাশি সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল, রাজবাড়ি, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ মেহেরপুরের বিভিন্ন বাগান থেকে মরসুমি ফল আম-লিচু কিনে বিভিন্ন জেলায় সরববাহ করে থাকেন। অনেকে আম-লিচুর মুকুল আসার আগে মরসুমি ফল হিসেবে বাগান লিজ নিয়ে ব্যবসা করেন। কিন্তু এবছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ দশমিক ৮ এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৯ দশমিক শূন্য এবং সর্বনিম্ন ঢাকায় ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণিকূল।

মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডপাড়ার খোকন শেখ বলেন, এ বছর তিনি ৩টি আমবাগান লিজ নিয়েছেন। বাগানে জমির পরিমাণ ৮ বিঘা। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বাগানে মুকুল ও গুটি দেখে অধিক লাভবান হওয়ার আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বোশেখের মাঝামাঝি সময়েও বৃষ্টির দেখা না মেলায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, গাছের আম ঠেকাতে বাড়তি খরচ করে বাগানে পানি সেচ দিচ্ছি। আম ঝরে যাওয়া রোধ করতে হরমনে স্প্রে করেছেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির পানির মতো উপকার হবেনা বলে মনে করেন তিনি।

মেহেরপুর শহরের কাজি অফিসপাড়ার রফিক শেখ বলেন, তিনি চার বিঘা জমির একটি লিচুবাগান ফলকর হিসেবে লিজ নিয়েছেন। এতে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল আসে ও গাছে গাছে গুটি ধরেছে প্রচুর। কিন্তু এ সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুতে পোকা ধরার ও দাগ হওয়ার ভয়ে আছেন তিনি।সাতক্ষীরার হাসান নামের এক ব্যবসায়ী মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ এলাকায় আমের বাগান কিনেছেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে মেহেরপুর এলকায় বাগান কিনে ব্যবসা করছি। লাভবানও হয়েছি। কিন্তু এবছর লাভের মুখ দেখতে পাবো বলে মনে হচ্ছেনা।     মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে, এ জেলায় ২ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমচাষ ও ৪৬০ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে। এবছর গাছে প্রচুর মুকুল ও পর্যাপ্ত গুটি ধরায় আম-লিচুর ফলনে এ জেলার বাগানমালিকদের সাথে সাথে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও খুশি ছিলো। তবে এমুহূর্তে অনাবৃষ্টির কারণে আম-লিচুর প্রচুর ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শ্রী চৈতন্য কুমার দাস জানান, ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে বাগানে সুষম সার ছটিয়ে পানি সেচ দেয়া জরুরি। সন্ধ্যা-সকালে স্প্রের মাধ্যমে আম-লিচু ধুয়ে দেয়ার পক্ষে মত দিলেও এ অবস্থায় হরমন জাতীয় কোনো ওযুধে স্প্রে না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।