আমডাঙ্গার নাপিত নিরঞ্জন এখন নামকরা কবিরাজ : হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা

তন্ত্র-মন্ত্র ও প্রতারণার ফাঁদে শিকার হচ্ছে সরলসোজা মানুষ

 

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা সিদ্দিকিয়া মাদরাসাপাড়ার সন্নিকটে মন্দির সংলগ্ন বাড়িতে বসে নিরঞ্জনের পাতা ফাঁদে এখনো শিকার ধরা পড়ছে। অনেকেই ঝুলিঝাড়া হচ্ছে তার অভিনব প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। নারী-পুরুষদের মাঝে নানা রকম তন্ত্রমন্ত্র পড়ে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন নিজের অবস্থানকে। কখনো কালীমন্ত্র আবার কখনও আরবি শব্দ-বাক্য পড়ে মন ভোলান কিছু অসচেতন মানুষের। তার ঝাড়ফুঁকের শিকার হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছে। ভুয়া কবিরাজ নিরঞ্জন তার বাণিজ্যকে টেকসই করে রাখার জন্য সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসন ও কিছু রাজনৈতিক নেতার চামচাকে পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখেন বলে অভিযোগকারীরা জানান। এক সময়ের নাপিত নিরঞ্জন এখন বড় কবিরাজ।

অভিযোগ আছে, নিরঞ্জন চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজি করে আসছেন। প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে তার এ কবিরাজি ব্যবসা শুরু হলেও এখন তা চলে প্রতিদিনই। তবে এ ব্যবসা আরো জমজমাট হয় প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে। কবিরাজির আড়ালে দু হাতে লুফে নিচ্ছেন টাকা। তাবিজ-কবচ থেকে শুরু করে তেলপড়া পানিপড়া সব কিছুতেই হাতিয়ে নেন টাকা। তার এ অবৈধ ব্যবসাকে জায়েজ করার জন্য কবিরাজ নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা ঢাকা কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে প্রকাশিত পত্রিকার আলমডাঙ্গা প্রতিনিধিসহ পুলিশ প্রসাশনকে প্রতিমাসে শ্রেনিবিন্যাস করে টাকা দেন। তিনি কতিপয় দালালের মধ্যামে পুলিশ, মাস্তান ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন। ভণ্ড কবিরাজ নিরঞ্জনের ভণ্ডামি দেখতে তার বাড়িতে যেয়ে দেখা যায় গোয়ালঘর সংলগ্ন একটি টিনের ছাপড়া ঘরে রয়েছে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া। এই গাছ গাছড়া  আর কথিত কালীসাধনা করে তিনি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। কবিরাজ নিরঞ্জন সাধারণত মহিলাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। মহিলাদের এমন কোনো রোগ নেই যে তিনি সারতে পারেন না। দু-একটা পুরুষ রোগী দেখেন। যাদের আলসার, গ্যাস্টিক হাঁপানি ও হার্টের সমস্যা তাদের  চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার কাছে চিকিৎসা নিতে এলে  মহিলাদের বলেন, তোমার  বাও-বাতাসের ভাব হয়েছে। ১০১টাকা দিতে হবে তাবিজ করতে। মহিলাদের কাছ থেকে এভাবে ভাওতাবাজি করে টাকা হাতিয়ে নেন। আরো অভিযোগ রয়েছে, জে সকল মহিলার সন্তান হয় না তাদের একবস্ত্রে অন্ধকার ঘরে নিয়ে চিকিৎসার নামে শ্লীলতাহানি করে থাকেন। লোকলজ্জার ভয়ে মহিলারা তাদের এসব সমস্যার কথা জানায় না। কোনো মহিলার বুকে ব্যথা অনুভূত হলে তাদেরকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে বুকে তেলমালিশ করে থাকেন। আবার কারো কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে ও একই কায়দায় মহিলাদের অন্ধাকার ঘরে নিয়ে বুকের ওপর কাসার বাটি চালান দেয়ার নাম করে যৌন নির্যাতন করে বলে ও অভিযোগ রয়েছে । রোমেছা (২০) বাড়ি জয়রামপুর তার কাছে থেকে বাউবাতাসের ভাব হয়েছে বলে ১০১টাকা নেয় । খদেজা (৩০) বাড়ি কুরসা। সেও গত দুই সপ্তাহ ধরে বাউবাতাসের কারণে ১০১ টাকা করে দিয়ে আসছে; কিন্তু তাতে তার কোনো উপকারে আসেনি। কবিরাজের কাছে চিকিৎসা ফি সর্বনিম্ন ১০১ টাকা থেকে শুরু এক হাজার আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ হাজারের ঊর্ধ্বে।

চাকরি পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এ ছাড়া পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নাম করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বাগিয়ে নেন টাকা। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বহাল তবিয়তে এ প্রতারণা চালালেও প্রতারণা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ইতঃপূর্বেও এ ব্যাপারে পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা থেকে নিরঞ্জন আলমডাঙ্গায় চলে আসেন। প্রায় তিন বছর আগে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের সোনালী ব্যাংকের পাশে একটি চুল-দাড়ি কাটানোর দোকানের নাপিত ছিলেন স্বর্গীয় নাড়ু গোপাল বিশ্বাসের ছেলে নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাস। তিনি নাপিতের কাজ ছেড়ে দিয়ে তার মাদরাসাসাপাড়ার বাড়িতে সব রোগের চিকিৎসা দিয়ে বিখ্যাত কবিরাজ বনে বসে আছেন। তার কবিরাজি করার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়নি। ভুয়া কবিরাজ আর ববিতা বিশ্বাস নামের একজন জোরেশোরে প্রতারনার ফাঁদ পেতে দু হাতে টাকা কামাচ্ছেন। অবৈধ উপায়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে গরিব অসহায় মানুকে ঠকাচ্ছে ইতঃপূর্বে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার ভণ্ডামির কথা প্রকাশ হলেও তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রতারণা করে চলেছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন । এ ব্যাপারে থানা পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে ভুক্তভোগী মহল মনে করে।