আমঝুপি বাজারের মুদিব্যবসায়ী কুদ্দুসকে জবাই করে খুন

 

মেহেরপুর আমঝুপি মেঠোপথে দিবালোকে দুর্বৃত্তদের নৃশংসতা : গ্রেফতার ১

 

আমঝুপি প্রতিনিধি:মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বাজারের মুদিব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস (৪৫) দুর্বৃত্তদের নৃংশসতার শিকার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। দুপুরে গ্রামের মাঠের একটি বাঁশবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পেছনে দৃশ্যমান কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও সন্দিগ্ধ একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যার মোটিভ নিয়ে এলাকার চলছে নানা গুঞ্জন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমঝুপি গ্রামের জান মহাম্মদের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস আমঝুপি হাটের একজন মুদিব্যবসায়ী। পাশাপাশি চাষের সাথে জড়িত।গতকাল সকালে কাটিকাটা বিলে তিনি কয়েকজন মজুরের সাথে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছিলেন।সকাল ১০টার দিকে মজুরদের খাবার নিতে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তারপর থেকেই তার খোঁজ মিলছিলো না। এদিকে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে বাড়ির লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন। শুরু হয় কুদ্দুসের সন্ধান। তার জামাই বাড়ি থেকে বিলের উদ্দেশে রওনা দেন। এর মাঝে মাঠের কয়েকজন কৃষক গরু চরাণোর সময় তার লাশ দেখতে পান।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, আমঝুপি গ্রামের আবু শামার বাঁশবাগানের মধ্যে সামান্য গর্ত করা একটি স্থানে কুদ্দুসের লাশ গাছের ডালপাতা দিয়ে ঢাকা ছিলো। কৃষকদের সহায়তায় তার পরিবারের লোকজন লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিল ও সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আতিয়ার রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করা হয়। শুরু হয় পুলিশের তদন্ত। হত্যাকাণ্ডের তেমন কোনো ক্লু না পেয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। তবে তদন্তের এক পর্যায়ে সম্ভাব্য একাধিক ক্লু ধরা পড়ে পুলিশের চোখে।

মামলা তদন্ত ও হত্যকারীদের গ্রেফতারের স্বার্থে তদন্তের বিষয়টি গোপন রেখে সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আতিয়ার রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আমঝুপি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে রফিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানায় চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

এদিকে হত্যকাণ্ডের রহস্য নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। সন্ত্রাসীদের চাঁদা দাবি, পূর্ববিরোধ ও পারিবারিক একটি বিষয় উঠে আসছে স্থানীয়দের আলোচনায়। তবে তার সাথে কারো বিরোধ ছিলো না এবং সে হত্যকাণ্ডের শিকার হতে পারে বলে কোনো প্রকার ধারণা ছিলো না গ্রামের মানুষের। নিহতের লাশের ময়নাতদন্তশেষে গতরাতে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমঝুপি আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজাশেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

পারিবারিক পরিচয়:সকালে কুদ্দুস নিখোঁজের পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার অকাল চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। নিহতের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা এখন পাগল প্রায়। কুদ্দুসের দু মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে বিবাহিতা। ছোট মেয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজের এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। একমাত্র ছেলে লেখাপাড়ার করার পাশাপাশি পিতার ব্যবসার কাজে সময় দেয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে।