আবারো আলোচনায় গাংনীর বামন্দীর সেই শাহীন ক্লিনিক: অপচিকিৎসায় এক নারীর জীবন সঙ্কটাপন্ন

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজারের সেই শাহীন ক্লিনিকে আবারো অপচিকিৎসার ঘটনা ঘটেছে। এবার এক নারীর জরায়ু অপারেশন করেছেন ওই ক্লিনিকে কথিত এক চিকিৎসক। অপচিকিৎসায় এখন রোগীর জীবন সঙ্কটাপন্ন। ক্লিনিকটি নিয়ে তাই আবারো শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

ভুল অপারেশনের ভুক্তভোগী বামন্দীর আলেফ হোসেন জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে থেকেই তার স্ত্রীর জরায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। এ নিয়ে মেহেরপুরে এক চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অপারেশনের পরামর্শ দেন। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সেখানে অপারেশন না করে বামন্দীর শাহীন ক্লিনিকে আসেন। ক্লিনিক মালিক কথিত ডা. শাহীন নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন। তিনি গ্যারান্টি সহকারে অপারেশনের জন্য ৬ হাজার টাকা খরচ দাবি করেন। তাতেই রাজি হয়ে অপারেশনে রাজি হন আলেফ হোসেন। শাহীন ক্লিনিকে তার স্ত্রীর অপারেশনে হলে আগের চেয়ে সমস্যা আরো বেশি দেখা দেয়। রোগীর সঠিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় হয়। কিন্তু তারপরও রোগীর শারীরিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার কোনো ভালো হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসক। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারের পক্ষ তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বর্তমানে স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। এখন তার জীবন সঙ্কটাপন্ন বলে জানান আলেফ হোসেন।

এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে ইতোমধ্যে আত্মগোপন করেছেন কথিত ডাক্তার শাহীন। ক্লিনিক খোলা থাকলেও ক্লিনিকের তেমন কারো আনাগোনা নেই বলে জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগের বিষয়ে শাহীন ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী স্বঘোষিত ডাক্তার শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফিরোজ রায়হান অপারেশন করেছেন। ডাক্তার ভুল অপারেশন করলে আমার কী করার আছে? যথাযথ নিময় মেনে অপারেশন করা হয়েছে। রোগীর লোকজন অযথা তাকে দোষারোপ করছে। তবে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সেই চিকিৎসক ফিরোজ রায়হানের মোবাইলফোনে দু দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, শাহীন ক্লিনিকই বামন্দীর আলোচিত সেই সততা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার। গত বছরের ১৬ আগস্ট বাদিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবু জাফরের সাড়ে চার বছর বয়সী মেয়ে নুর খাতুনের বোগলের ফোড়া অপারেশন করা হয় সেখানে। বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে দাবি করা বামন্দীর মোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে নাজমুল হুদা অপারেশন করেন। ভুল অপারেশনে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অপারেশনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যায় শিশু নুর। শিশুকে হত্যার অভিযোগ তুলে স্বজনরা প্রতিবাদ করলে কৌশলে ক্লিনিক তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় নাজমুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টরা। পরদিন নাজমুল হুদাসহ চারজনের নামে গাংনী থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন আবু জাফর। আইনি ঝামেলা এড়াতে কয়েকদিনের মধ্যে বাদীর সাথে আড়াই লাখ টাকায় আপস মীমাংসা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে তখন দৈনিক মাথাভাঙ্গায় কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর কিছুদিন পরে গাংনী উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার আব্দুল সালাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ক্লিনিকটি সিলগালা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অপকৌশলে সততা ক্লিনিকের নাম বিলুপ্ত করে একই ভবনে একই লোকজন শাহীন ক্লিনিক নামে আবারো চালু করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাম পাল্টালেও পাল্টায়নি ক্লিনিকে সেই অপকর্ম। তাইতো আবারো ঘটলো অপচিকিৎসার ঘটনা। দ্রুত ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় লোকজন।