আন্দোলন কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতা বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় যতো কঠোর হওয়া প্রয়োজন ততো কঠোর হবো। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিরোধী দলের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ করুন। না করলে কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে। জাতীয় নির্বাচনের পর বিজয়ী দলের প্রথম এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি সরকারকে সহযোগিতার জন্য দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। টানা ৯ দিনের হরতাল অবরোধ শেষে ক্ষমতাসীন দলের এ সমাবেশ ঘিরে রাজধানীজুড়ে ছিলো তীব্র যানজট। সমাবেশে ঢাকা ও আশপাশ জেলার নেতাকর্মীরা নবনির্বাচিত এমপিদের নেতৃত্বে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন মানুষ খুন, বোমাবাজি, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসুন। অনেক খেলা দেখিয়েছেন আর না। মানুষকে আর যন্ত্রণা দেবেন না। কষ্ট দেবেন না। এগুলো বন্ধ করুন। যদি কিছু বলার থাকে আলোচনা করুন। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি নির্বাচনে আসেননি ভুল করেছেন। ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে। এর আগে তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছিলেন শত বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ-ও বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবো না। উনি অভিশাপ দেন আমাকে আর লেগে যায় তার ওপর। যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো দেশে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হোক। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখতে চায়। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ চায় না। এজন্য দেশের মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তারা শত বাধা বিপত্তি, বোমাবাজি সত্ত্বেও ভোটে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে তাদের পুনর্বাসন করা হয়। হত্যা-খুনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছিলেন জেনারেল জিয়া। সঙ্গীনের খোঁচায় সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করা হয়। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেষ্টা করা হয়েছিলো তখন। শত ষড়যন্ত্রের মুখেও আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত থেকেছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করার পর দেশের মানুষের ওপর আবার অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ শুরু করি। দেশ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে একজনের মনে শান্তি থাকে না। মানুষ ভালো থাকলে উনি অশান্তিতে ভোগেন। উনার আন্দোলন মানে বোমা হামলা করে নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করা, এ অশান্তি বেগমের হাত থেকে ড্রাইভার, হেলপার, ঘুমন্ত মানুষ, গরু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। যখনই আমি সমঝোতার ডাক দিয়েছি তখনই তিনি আলটিমেটাম দিয়েছেন। সমঝোতার পথ বন্ধ করেছেন। সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের অপরাধ তারা নৌকায় ভোট দিয়েছে, তাদের অপরাধ তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য  নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ অগ্রযাত্রায় কেউ যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করা হবে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এ সময়ে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। গোপালগঞ্জ নিয়ে খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ সম্পর্কে উনার খুব রাগ। সেখানে জাতির পিতা ঘুমিয়ে আছেন। সেখানে আমার জন্ম, উনি গালমন্দ করলেন। উনার কটূক্তি আপনারা শুনেছেন। তিনি বলেন, তবে বাংলাদেশের মানুষ চায় সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাক। তারা শান্তি ও উন্নয়ন চায়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের তারা আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে তাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। হরতাল অবরোধ দিয়ে আর অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কাছে আমি সেই সহযোগিতা চাই। সাধারণ জীবনযাত্রা চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা কেউ সৃষ্টির চেষ্টা করলে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে সহায়তা করবেন। জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরেই যদি রাজাকারদের ধরে ধরে শেষ করে দিতে পারতাম তাহলে জাতির পিতাকে হারাতাম না। তিনি বলেন আগামী দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে ছিলো আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যাপক প্রস্তুতি। ঢাকার বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে যান। তাদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও স্থানীয় এমপি অথবা নেতার ছবি সংবলিত পোস্টার দেখা যায়। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারেও নেতাকর্মীরা অংশ নেন সমাবেশে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা: স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, অ্যাড. সাহারা খাতুন ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ আব্দুস শহিদ ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।