আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের পেশাদার দু’সদস্যকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোর্পদ

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের পেশাদার দু’সদস্যকে পুলিশ সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোর্পদ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে আটক রাখার আদেশ দেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি গ্রামের সবুজ হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন আন্দুলবাড়িয়া-ডুমুরিয়া সড়কের পাশে ১২৫সিসি ডিসকভারি মোটরসাইকেল রেখে পিয়ারা বাগানে পিয়ারা নিতে যায়। ক্ষেত থেকে পিয়ারা নিয়ে ফিরে দেখে ভদ্রবেশী দু’ব্যক্তি তার মোটরসাইকেলের লক ভাঙছে ও তার কাটছে। তিনি চিৎকার দিলে দু’জন অবস্থা বেগতিক দেখে মোটরসাইকেলটি ফেলে নিজেদের ব্যবহৃত হিরোহোন্ডা ১৫০ সিসি মোটরসাইকেলযোগে আন্দুলবাড়িয়া বাজারের দিকে পালিয়ে যায়। শিমুল হোসেন সাহসিকতার সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে চিৎকার দিতে দিতে দু’চোরের পিছু ধাওয়া করে। পিছু ধাওয়া খেয়ে ভদ্রবেশী দু’চোর টালমাটাল হয়ে আন্দুলবাড়িয়া বাজারের মিশুক স্ট্যান্ডে জ্যামে আটকে গেলে স্থানীয় জনতা তাদেরকে ধরে ফেলে। পরে উত্তেজিত জনতা তাদেরকে গণধোলাই দেয়। আটক দু’ব্যক্তি অভিন্ন ভাষায় নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে সানোয়ার হোসেন ও সোহরাব হোসেন সিরু বলে দাবি করেন। খবর পেয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনর্চাজ মাহমুদুর রহমানের নির্দেশে স্থানীয় শাহাপুর ক্যাম্প ইনর্চাজ এসআই বাবুল হোসেন সঙ্গীয় র্ফোসসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতার নিকট থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন। পুলিশ হেফাজতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহরাব হোসেন সিরু সাবেক ইউপি সদস্য ও সঙ্গীয় সানোয়ার হোসেন আপন সহোদর ভাই বলে জানান। পুলিশ নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ করার পর তাদের ব্যবহৃত একটি লাল রঙের ১৫০ সিসি হিরোহোন্ডা মোটরসাইকেল, গাড়ি চুরির সরঞ্জাম ১টি সেলাই রেন্স ও ১টি তারকাটা প্লাস তাদের নিকট থেকে উপস্থিত জনতার সামনে উদ্ধার করে। আটক দু’চোরকে পুলিশ জীবননগর থানায় হস্তান্তর করে। সূত্র জানান, দীর্ঘদিন যাবত চক্রটি চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ জেলার বাইরে বিভিন্নস্থানে মোটরসাইকেল চুরি, ড্রয়ার ভেঙে টাকা চুরি, পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেল চেকিংয়ের নামে রাস্তা থেকে মোটরসাইকেল ছিনতাই, দামি মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনতাই কাজে জড়িত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মেহেরপুর ও দামুড়হুদাসহ বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ধরা পড়লে এরা আইনের ফাঁকফোঁকড় দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বেড়িয়ে এসে আবারও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে এ সিন্ডিকেট চক্রটির সাথে বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার একটি অপরাধ চক্রের রয়েছে বিশেষ সখ্যতা। ওই এলাকার মোটরসাইকেল এদিকে আর ওদিকের মোটরসাইকেল এদিকে নিয়ে বেচাবিক্রির সাথে আটক দুজন জড়িত বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেলের জাল কাগজপত্র তৈরিতে দু’ভাই অভিজ্ঞ। মুহূর্তের মধ্যে চোরাই মোটরসাইকেলের নম্বর মুছে নতুন নম্বর দিয়ে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দেদারচ্ছে এলাকায় একাধিক মোটরসাইকেল বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাল কাগজপত্র তৈরির উৎস ও সিল ছাপ্পড় উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধৃত মোটরসাইকেল চোরচক্রের দু’সদস্যের রয়েছে কানাইডাঙ্গা গ্রামে আলিসান বাড়ি, নিজ নামে সহায় সম্পদসহ ঢাকাতে বিলাসবহুল বাড়ি। জনশ্রুতি উঠেছে, এদের সাথে কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী ও পুলিশের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সখ্যতা রয়েছে। সূত্র মতে এদের জিজ্ঞাসাবাদে ও মোবাইলে সেভ নম্বর দেখলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। একটি প্রভাশালী মহল চক্রটিকে বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকার তদবীর মিশন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। গত সোমবার জনতার হাতে ধরা খাওয়ার পর সম্প্রতিকালে আন্দুলবাড়িয়া এলাকা থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরি হওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে বলেন, এরাই আমার মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এ ব্যাপারে শিমুল হোসেন বাদী হয়ে গত সোমবার জীবননগর থানায় ধৃত সোহরাব ও সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গতকাল মঙ্গলবার আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে সোর্পদ করে।